মেকানিক্যাল ডে ২০১৫: উৎসবে বর্ণিল চুয়েট

মি

ইনজামামুল হক

প্রকৌশল শিক্ষা ও শিল্পচর্চা পারষ্পরিক সাংঘর্ষিক হলেও উদ্যম এবং সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে তা কোন বাধাই নয় । বলছি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত মেকানিক্যাল ডে-২০১৫ এর কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে গত ৭ মে, বৃহস্পতিবার উদযাপিত হল মেকানিক্যাল ডে-২০১৫। দুদিন ব্যাপী এই আয়োজনে পুরো চুয়েট যেন পরিণত হয়েছিল উৎসবের ক্যাম্পাসে।

৭ মে মেকানিক্যাল ডে হলেও উদযাপন শুরু হয় ৬ মে সন্ধ্যাবেলাতেই । শুরুটা হয় রোবোরেস গ্রাউন্ডে আতশবাজির আলোক উৎসবের মধ্য দিয়ে । এর পরপরেই চুয়েট কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় যন্ত্রকৌশল বিভাগের ’১১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নির্মিত স্বল্পদৈঘ্যের টেলিফিল্ম ‘অধরা  অপ্সরী’ দিয়ে।  বিভিন্ন মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত এই টেলিফিল্ম সম্পর্কে পুরকৌশল বিভাগের শাহীন শেখ তো বলেই দিলেন, “চুয়েটকে এত সুন্দরভাবে আগে কেউ উপস্থাপন করতে পারে নি।” এরপরই বার-বি-কিউ পার্টির মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসবের প্রারম্ভিকতা ।

_DSC1080(1)পরদিন সকালে আনন্দ র‍্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মেকানিক্যাল ডে-২০১৫’ এর আনুষ্ঠানিকতা । একই টি-শার্ট পরিহিত যন্ত্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের এই র‍্যালি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয় । মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েট উপাচার্য ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম । চুয়েট উপাচার্যকে চমকে দিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় মানবসদৃশ হিউম্যানয়েড রোবট SM-1805 । পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়েট উপাচার্য বলেন, “নবীন প্রকৌশলীদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ড নিরন্তর চালিয়ে যেতে হবে । এর ফলে ক্যারিয়ার ডেভলপের পাশাপাশি গবেষণাক্ষেত্রেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।” চুয়েটে রোবোটিক্স ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি যন্ত্রকৌশল বিভাগের চলমান অগ্রযাত্রায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ।যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আবদুল ওয়াজেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. বদিউস সালাম এবং আইইটি এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম । পরে মেকানিক্যাল ডে উপলক্ষে আয়োজিত হয় বিশেষ সেমিনার ।

দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল নানা ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগীতার মধ্যে ছিল মেকানিক্স প্রতিযোগিতা, ডিজাইনিং প্রতিযোগিতা, রুবিক্স কিউব মিলানো প্রতিযোগিতা এবং প্রজেক্ট শো । মেকানিক্স প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ৩য় বর্ষের আতিকুর রহমান, ডিজাইনিং প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ৩য় বর্ষের সরোয়ার হোসাইন এবং মাত্র ২৬ সেকেন্ডে কিঊব মিলিয়ে রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ২য় বর্ষের রাফিদ উদ্দিন । আর প্রজেক্ট শোতে বিজয়ী হয় ‘ইভাপোরেটিং কুলিং সিস্টেম’ নামক প্রজেক্ট’।

এদিন নানা কর্মসূচীর পর সন্ধ্যায় চুয়েট কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় বিশেষ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার । এই উপলক্ষে চুয়েটের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মিলনায়তন পর্যন্ত সাজানো হয় নান্দনিক আলোকসজ্জায় । দেখা যায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই মিলনায়তন লোকে লোকারণ্য, যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই । এই দর্শকমুখর পরিবেশে সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ শুরু হয় মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা । সাবলিল উপস্থাপনার সাথে যন্ত্রকৌশলীদের একের পর এক চোখ ধাঁধানো পরিবেশনায় মোহাবিষ্ট দর্শক। নাচ, গান, নাটক , আবৃত্তি, শর্টফিল্ম   , মূকাভিনয় – কি ছিল না এতে ? মনমুগ্ধ দর্শকদের করতালির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান যখন শেষ হয় ঘড়ির কাটা তখন ১২ টা ছুঁইছুঁই। কিন্তু দর্শক সমাগম যেন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েই বাড়ছিল । কারণ এখনো যে বাকি আছে এই সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অ্যাভয়েড রাফা’ র কনসার্ট । শুরুটা হয় রাত সাড়ে ১২ টায় স্থানীয় কয়েকটি ব্যান্ডের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে । তাদের প্রাণবন্ত পরিবেশনার পর রাত দুইটা নাগাদ মঞ্চে প্রবেশ করে ‘অ্যাভয়েড রাফা’র সদস্যরা । তাদের প্রতিটি পরিবেশনার সাথে দর্শকদের তুমুল গর্জন , প্রকম্পিত চুয়েট অডিটরিয়াম যেন বাংলাদেশের গর্জে উঠা তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি । উৎসবের এই মহাযজ্ঞ যখন শেষ হল ,একটু একটু করে ফুটতে শুরু করেছে দিনের আলো ।অনেক প্রাপ্তির এই মেকানিক্যাল ডে শেষে শিক্ষার্থীরাও ফিরতে শুরু করেছেন নিজ নিজ হলের দিকে । সূর্যের আলো যেমন রাঙাতে শুরু করছে চারদিক তেমনি শিক্ষার্থীদের মনের গহীনে থাকা স্বপ্নগুলো যেন রঙিন হচ্ছে একটু একটু করে । এই স্বপ্ন গবেষনায় এবং উদ্ভাবনে স্বদেশকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন । স্বপ্নবাজ এই তরুণরাই গড়বে আগামীর আলোকিত বাংলাদেশ ।

তারিখ: ২৮-০৫-২০১৫ইং