চুয়েটের ছাত্র হলে শিক্ষকের মদ্য পানের অভিযোগ

চুয়েটনিউজ২৪ ডেস্ক: 

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রদের একটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের এক শিক্ষকের গভীর রাতে মদ্য পানে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩১ মে শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক চার ঘটিকায় শহীদ তারেক হুদা হলে এমন ঘটনা ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার চুয়েটের ৪৯ তম ব্যাচের(শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯) শিক্ষা সমাপনী উৎসবের শেষ দিন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এলকায় বাস্কেটবল মাঠে কনসার্ট আয়োজন করা হয়৷ কনসার্ট চলাকালে এই রাতে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক শাফকাত আর রুম্মান শহীদ তারেক হুদা হলে রাত চারটা নাগাত মদ পান করতে যান। এর কিছু সময় পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী ও চুয়েটের ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনা স্থলে পৌঁছায় এবং শিক্ষার্থীদের সামনে মদ পান ও মাদক সেবন রত অবস্থায় রুম্মান উদয় কে দেখতে পান। এসময় তিনি উত্তেজিত উপস্থিত সকলকে বকাঝকা করেন।এর কিছুক্ষন পর তিনি  নিচে নেমে তারেক হুদা হল ও শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের মধ্যবর্তী স্থানে আহাজারি করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জান্নাতুল ফেরদৌস কে শান্ত করে রুম্মান উদয় কে ধরাধরি করে শিক্ষক ডরমিটরি তে পৌঁছে দেন। 

বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শিক্ষকের কাছে এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আমি কনসার্টের এক মুহূর্তে শহীদ তারেক হুদা হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন ঐ হলের ৩য় তলায় চেচামেচি শুনি। ছেলেদের কাছে থেকে শুনি যে শিক্ষক  ও তার স্ত্রী গন্ডগোল করতেছে মাদক/মদ পানের বিষয়ে। এরই কিছু পরে ওনারা হল থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় ঐ শিক্ষক ওনার স্ত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং চেচামেচি না করার অনুরোধ করেন। 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন আরেক শিক্ষার্থী জানান, প্রথমে  হলের তিনতলায় চেচামেচি শুনি। দেখি মেয়েটা একজন শিক্ষার্থীকে  বকাঝকা ও থাপ্পর দিচ্ছে। আর রুম্মানকে বকাঝকা করতেছে এরপর নিচে এসে ওনার বাড়িতে কল দিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিল।

তবে এ দিকে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক কিংবা তার স্ত্রী ঘটনাটিকে গুজব বলেছেন।  মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস বিষয়টি অস্বীকার করেন। ঘটনার রাতে ছাত্র হলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে বলেন, আমি ঐ রাতে ছাত্রহলে যাই নি। বিষয়টি নিয়ে গুজব ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। র্যাগ উৎসব নিয়ে ভিজিলেন্স টিমের সদস্য হিসেবে রুম্মান স্যার হয়তো ঐ হলে গিয়েছেন,সে সময় অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন।  

মদ্য পানের অভিযোগ ও ঐ রাতের ঘটনায় শাফকাত আর রুম্মানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই ঘটনা শুনে আমি নিজেও অবাক।এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি গুজব। যা আমার নামে ছড়ানো হয়েছে।কেউ কোন প্রমাণ পায়নি। এভাবে একটি গুজব ছড়ানো চুয়েটের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে।

তবে ছাত্রহলটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উক্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা সেদিন রাতেই ঘটনা ঘটার সময়েই হল প্রভোস্টকে তৎক্ষনাৎ অবহিত করেন। এ বিষয়ে শহীদ তারেক হুদা হলের প্রভোস্ট ড. নিপু কুমার দাস বলেন, সেদিন রাতে(শুক্রবার) হল থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় ,একজন নারী হলে ঢুকে শোরগোল করছেন। সেখানে একজন শিক্ষক ও নাকি রয়েছেন। এবং ঐ নারী নাকি শিক্ষককে চেচামেচি করে বকাঝকা করছেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পারি ঐ নারী উক্ত শিক্ষকের স্ত্রী। এসব শোনার পর ঘটনার আঁচ করতে পারি। এরপর ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নেতৃত্বাধীন পরিদর্শনকারী দলকে জানাই। 

বিষয়টি অবগত হয়েছেন এমন জানিয়ে  চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি মাত্র। অভিযুক্ত শিক্ষকের এমন কর্মকান্ড দুঃখজনক। সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে তদন্ত কমিটি করার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত শিক্ষকের এমন অপকর্ম নতুন নয়। তিনি শিক্ষার্থী থাকা কালীন তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন, মারামারি সহ  নানাবিধ অপকর্মের অভিযোগ ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *