স্থায়ী সমাধান হয়েছে চুয়েট ছাত্রীদের আবাসন সমস্যার

ইপসিতা জাহান,নাফিসা নাওয়ার:

যুগের পালাক্রমে বাড়ছে প্রকৌশল বিদ্যায় নারীর আগ্রহ। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিনদিন নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যাও। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) তাদের নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে অনেকটাই সফল হয়েছে।

ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২০০। আর ছাত্রীদের জন্য তিনটি আবাসিক হলে সব মিলিয়ে প্রায় ১৩০০ টির বেশি আসনের ব্যবস্থা আছে। এ ১২০০ নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আবার চট্টগ্রাম শহরে থাকে যারা হলে আসন নেয়নি। এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হল নামের আরও একটি হল। এ হলটিতে প্রায় ৪০০-৪৫০ আসনের ব্যবস্থা করা হবে।

সেক্ষেত্রে নির্মাণাধীন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হলের কয়েকটি তলায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানা যায়। এতে ধারণা করা যাচ্ছে, আগামীতে চুয়েটে নতুন বিভাগ চালুর ফলে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও অন্তত ২০৩০ পর্যন্ত আবাসন নিয়ে তাদেরকে সমস্যা পড়তে হবে না।

তবে বছর চারেক আগেও হলে একটি আসন পেতে ছাত্রীদের পোহাতে হতো বেশ ভোগান্তি। ছাত্রীদের আবাসন সমস্যার এ দুর্দশা নিরসনে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এ কে খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের অর্থায়নে প্রায় ৫০০ আসন বিশিষ্ট শামসেন নাহার খান হলটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরো দুটো ছাত্রী হল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৫০ আসনের তাপসী রাবেয়া হলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং তাতে আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হল নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে।

হলের দূর্বিষহ জীবন নিয়ে চুয়েটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (‘১৬ ব্যাচ) প্রাক্তন শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাজমিন চুয়েট নিউজ২৪’কে জানান, “২০১৭ সালে যখন ক্যাম্পাসে আসি, তখন ১টা মাত্র ছাত্রী হল ছিলো। আমরা এক গণরুমে ৪৪জন মেয়ে ছিলাম। থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা সবই করতে হয়েছিল নিজের বেডেই। এমনকি হাটার জায়গা পর্যন্ত ছিলো না। রুম থেকে বের হতে চাইলে, অন্যের বেডের উপর দিয়ে যাওয়া লাগতো। চুয়েট জীবনের তিনটি বছর কেটে যায় এ গণরুমেই। এরপর শামসেন নাহার খান হলের উদ্বোধনের পর সকল ছাত্রীরা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি। এরপর আর ডাইনিং এর জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে হয়নি, ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি। এভাবেই শিক্ষাজীবনের শেষ বছরে এসে শামসেন নাহার খান হল আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ হয়ে উঠে। আমাদের ছোট বোনরা এখন আর সেই সমস্যায় পড়েনা যা আমরা পার করে এসেছি। এটা দেখেই খুশি আমরা। “

হলের আবাসনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম বলেন, “পূর্বে, যখন চুয়েটে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য একটি হল ছিল, তখন শিক্ষার্থীরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতো। এখন, আরও দুটি হল যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা আর এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে না। চট্টগ্রামের বাইরে শিক্ষার্থীরা সহজেই হলে আসন পাচ্ছে। অধিকন্তু, খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, যা চুয়েটে সকল ছাত্রীদের জন্য আরো আরামদায়ক এবং আনন্দদায়ক জীবনযাপনের অভিজ্ঞতায় অবদান রেখেছে।”

ছাত্রী হলগুলোর সামগ্রিক অবস্থার ব্যাপারে শামসেন নাহার খান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা জানান, “আগে নারী শিক্ষার্থীদের হলে আসন পেতে যে সমস্যা হতো তা এখন হয়না। হল গুলোতে ছাত্রীদের জন্য পড়ার উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। এছাড়াও অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে হলগুলোতে। যেমন মহিলা দ্বারা পরিচালিত ক্যান্টিন, স্টেশনারি দোকান রয়েছে। এছাড়াও শামসেন নাহার খান হল ও সুফিয়া কামাল হলে ইতোমধ্যে ওয়াশিং মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে, বাড়ছে চুয়েটে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও। যেহেতু আরেকটি হল নির্মানাধীন, সেহেতু ভবিষ্যতেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করা যায়।”

এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “চুয়েটের ছাত্রী হলগুলোতে আর গণরুম বলে কিছু থাকছেনা। পূর্বে সুফিয়া কামাল হলের গণরুম হিসেবে ব্যবহৃত রুম সমূহকে অন্য কাজে যেমন- নতুন রিডিং রুম, হল লাইব্রেরী, কমনরুম প্রভৃতি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তার নারী স্বজনরা আসলে কমনরুমে থাকতে পারবে। এছাড়াও হলে কর্মরত নারী কর্মচারীদের বাচ্চাদের খেলার রুম হিসেবে আলাদা রুম বরাদ্দ করা হবে, এতে নারী কর্মচারীরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে। “

তিনি আরো জানান, “নির্মাণাধীন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হলের কাজ শেষ হলেই ৪টি ছাত্রী হলের মধ্যে যোগাযোগের পথ তৈরি করা হবে। যেহেতু নারী শিক্ষার্থীদের রাত ৮টার মধ্যে হলে প্রবেশ করতে হয় এবং বর্তমানে এক হল থেকে অন্য হলে রাত ৮টার পর যাতায়াত সম্ভব নিষিদ্ধ। পথ তৈরি করা হলে নারী শিক্ষার্থীরা রাত ৮টার পরও এ চারটি হলের মধ্যে এক হল থেকে অন্য হলে যাতায়াত করতে পারবে। এতে তারা গ্রুপ স্টাডি বা গ্রুপ কাজ গুলো একসাথে বসে করতে পারবে।”

উল্লেখ্য, ছাত্রীদের আবাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করলে, ছাত্রদের আবাসন সমস্যার এখনো পুরোপুরি সমাধান করতে পারেনি চুয়েট। ছাত্রদের জন্য নির্মাণাধীন মুক্তিযোদ্ধা হল চালু হলে সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে, এক্ষেত্রেও স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটা উচিৎ চুয়েটের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *