সাহিত্যের টানে চুয়েট শিক্ষার্থীরা

cuetnews24 ডেস্ক:

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের জীবনটা যেন তড়িত সার্কিটের ইনফিনিট লুপ।কখনো এটি বেনারসির মতো রঙিন,কখনো পরিণীতাদের মতো ছলনাময়ী আবার কখনো যাত্রীদের মতোই গন্তব্যবিলাসী।হাজারো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও তাদের প্রতিভারা যেন ঢেউয়ের মতোই হঠাৎ মস্তিষ্কের তীরে আঁছড়ে পড়ে।সৃষ্টি হয় সাহিত্যের,সৃষ্টি হয় সাহিত্যিকদের।এমন প্রতিভাবান রয়েছে আমাদের মাঝেও,তারা যেন সাধারণদের মাঝে থেকেও অসাধারণ।প্রকৌশল এর বেড়া ডিঙ্গিয়ে লেখক হয়ে উঠা ছয়জন শিক্ষার্থীদের জেনে নিবো আজ।

ইনফিনিট লুপ এর সৃষ্টিতে মুবিন লিখন

সবার সাহিত্যচর্চার শুরুটা এক হয় না,সাহিত্য মনকে কখন কিভাবে আকর্ষণ করবে তা বলা মুশকিল।এটাইতো সাহিত্যের বিশেষত্ব। সাহিত্যের সাথে মনের যোগসূত্র সবকিছু নিরপেক্ষ।শখের বসে নবম শ্রেণিতে  বিদ্যালয়ের দেয়ালিকায় নিজের একটা লিখা প্রকাশ পাওয়া থেকেই লেখক জীবনের শুরু চুয়েট এর কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ১৮আবর্তের শিক্ষার্থী মুবিন লিখন এর।লেখক জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন,

আমার একটি সুন্দর মুহূর্ত হলো ‘পরিবার ও বন্ধু -বান্ধব’এর বাইরে এক পাঠক আমার বই পড়ে আমাকে ফেসবুকে খুঁজে বের করে এবং মুঠোবার্তায় তার অনুভূতি জানায়।যেটা আমাকে সাহিত্যচর্চায় আরো প্রবল উৎসাহ দান করে।সবসময় চেষ্টা করেছি পাঠকদের মনে ইতিবাচকতা আনার জন্য কিছু রচনা করার।লেখাগুলো কিছুটা আত্নবিশ্বাসমূলকও।

তার মতে সাহিত্যচর্চার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত সাহিত্যপাঠ করা।’সমরেশ মজুমদার’এর ‘উত্তরাধিকার’ মুবিনের প্রিয় একটি সিরিজ।সামনের দিনগুলোতেও সাহিত্যের সাথে নিজকে সম্পৃক্ত রাখতে চান তিনি।শ্রীঘ্রই নতুন আরো একটি সাহিত্য কর্ম সবাইকে উপহার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুবিন।

তাশদীদ এর হাতে হাজার বছরের নিষিদ্ধ চুক্তিনামা

প্রকৌশলবিদ্যার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য চর্চা!এই ধারণা কারো কাছে কল্পনা মনে হলেও তারই বাস্তব প্রতিফলন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ১৮আবর্তের তাশদীদ।তার লেখা বই দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন শত বাধা প্রতিকূলও মানুষের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারে না।তার লিখনি যাত্রা সম্পর্কে বলেন,”

লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার বিষয়টি আমার ক্ষেত্রে ছিলো একটু অন্যরকম। ছোটবেলায় একাডেমিক বই ব্যতীত অন্য বইগুলো স্পর্শ করারও কোনো অনুমতি ছিলোনা ।বড় বোনের বিতর্ক প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া কিছু বই আমার আগ্রহকে নিয়ে যায় লেখকদের জগতে।  ২০১৪ সালে ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকার ‘রস আলো’তে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর এই আগ্রহ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

তাশদীদ চেষ্টা করে যাচ্ছেন লেখালেখির মাধ্যমে   নিজের এবং পাঠকদের চিন্তার পরিধি বৃদ্ধি করতে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে নন ফিকশনে বড় পরিসরে কিছু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

নিলীশা নীল বুনেন রৌপ্যদিগের বেনারসি~

প্রযুক্তির জটিল জীবন থেকে সরল মুক্তজীবনে বিচরণের আকাঙ্খা থেকেই ১৯ আবর্তের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের নিলীশা নীলের লেখালেখির সূত্রপাত।তার লেখনিতে পাওয়া যায় তার ব্যক্তিগত দর্শনের কথা।

তিনি বলেন,’শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাগুলো সবসময়ই আকর্ষণের জায়গা আমার জন্য।আমার লেখালেখিতে টুইস্ট রাখার চেষ্টা করি ফলে প্রতিমুহূর্তে গল্প নতুন রূপ ও মোড় নেয় ।বইয়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে আমার প্রিয় চরিত্র ‘রিদিতা ও তাজরিন’।২০১৯ সালে বইমেলায় আমার বইটি প্রকাশিত হলে এক পাঠক আমার কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেয়ার আগ্রহ পোষণ করে।এই মুহূর্তটি এখনও আমার লেখালেখির অনুপ্রেরণা।’

সামনে ‘রোমান্টিক ও কমেডি’র সংমিশ্রণে নতুন কিছু পাঠকের উপহার দেবেন নীল ।রৌপ্যদিগের বেনারসি ছাড়াও তোমার শতদল,অনুরাগ সন্দেহপ্রবন ও রাজু ঘটকের মহাবিপদ সহ মোট ৪টি বই লিখেন তিনি। পাঠকদেরকে প্রযুক্তিগত  জীবন থেকে একটা মুক্তজীবনে বিচরণ করার পথ দেখানোর প্রয়াসেই নীলের লেখালেখি।

মো: শাকিরুল ইসলাম এর পরিণীতা:

প্রিয়জনের প্রস্হান সর্বক্ষেত্রেই আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।এই বেদনাকে পুঁজি করে কেউ কেউ হয়ে উঠে বিশাল শব্দভাণ্ডারের গায়ক।এমন এক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই চুয়েটের ২২ আবর্তের বস্তু ও ধাতবকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো: শাকিরুল ইসলাম এর লেখালেখির সূচনা।তার গল্পগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জীবনের বিশেষ প্রিয়জন,বন্ধু- বান্ধব।

বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই শাকিরুলের লেখালেখি শুরু।নিজের জীবনে থেকে উতসাহ নিয়ে লিখেছেন ‘পল্টু দ্যা সুপার বয়’। যাতে তিনি তুলে ধরেছেন বন্ধুত্বের মর্ম এবং জীবনের কিছু টার্নিং পয়েন্ট ।’পরিণীতা’ নামেই হয়ত পাঠক অনেকটা বুঝে যায় গল্পটি কি বা কাকে নিয়ে।তিনি বলেন “শরৎচন্দ্র, হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা আমাকে গভীরভাবে আকর্ষণ করে।সামনের দিনে পাঠকদের জন্য কবিতার বই লিখে নিজের লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করছি।”

হিমুর ভাষায় এই শহরে খোদা আসে দু:খ হয়ে ~

মানুষের ভালোবাসা এই পৃথিবীর অনবদ্য এক প্রেরণা।ভালোবাসার কত ধরণ বা উদ্দেশ্য তা কোনদিনও কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না।মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই পুরকৌশল বিভাগের ১৮আবর্তের শিক্ষার্থী সাযীম হিমু চৌধুরীর কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ।

মানুষের সত্যিকারের ভালোবাসাই আমার কবি হওয়ার প্রেরণা। আমার এই লেখায় পাঠকদের প্রতি আমার মেসেজ-“ভালোবেসে তাদের পাশে দাঁড়ান যারা বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাঁচে,ভালোবাসতে জানে।”ভালোবাসা মানুষকে কতটা উপরে উঠাতে পারে তা অনুভব করুক আমার পাঠকরা।

মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন রায়হান এর কল্পনায় যাত্রী ~

বই পড়া সবচেয়ে সুস্হ বিনোদনের মাধ্যম।এই কথা সবাই মানলেও, সেই বিনোদনকে উপভোগ করতে জানি ক’জন।সবাই যেখানে অন্য কোন মাধ্যমে বিনোদন খুঁজতে ব্যস্ত সেখানে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগেরর ১৯আবর্তের  শিক্ষার্থী মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন রায়হান সুস্হ বিনোদন মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছেন।সেই মাধ্যমকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছেন লেখালেখির মাধ্যমেও।ইতিহাসের প্রতি একটু বেশিই ঝোঁক বেলায়েত এর।লেখকদের মধ্যে পছন্দ করেন আহমদ ছফা,হুমায়ুন আহমেদ,সমরেশ মজুমদারের লেখনি।এদিকে শামসুল আরেফিন শক্তি, আরিফ আজাদের বইও পড়া হয় তার।তার মানসম্মত লেখা উপহার দিতে প্রচুর পড়তে হয়,প্রচুর লিখতে হয়,সময় দিতে হয়।তিনি বলেন,

যাত্রী বইটার প্রকাশ আমার জীবনের এক বড় প্রাপ্তি। বইটিতে গল্পের ছলে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছি তা পাঠক সমাজ বিবেচনা করবে।পাঠকদের প্রতি আমার বিশেষ  বার্তা হলো,আমরা সবাই জানি বই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধু কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার এই সময়ে আমরা সেই বন্ধুকে প্রায়ই ভুলে গিয়েছি।আমাদের উচিত প্রকৃত বন্ধুকে সময় দেয়া।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *