মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে চুয়েট শিক্ষার্থীরা

চুয়েটনিউজ২৪ডেস্ক:

করোনাভাইরাস মহামারিতে মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে পরেছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান শিক্ষার্থীরা। করোনা কালে দীর্ঘদিন ধরে আয়ের পথ টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জব বন্ধ থাকা এবং পরিবারের আয় নিম্ন পর্যায়ে আসার কারণে মেস ভাড়া জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তুিক অঞ্চলে বসবাসরত এসব সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি ও ধমক দিচ্ছে মেস এবং বাসার  মালিক গণ।

ভাড়ার জন্য মেস মালিকদের বাধ্য করার কারণে একধরনের মানসিক চাপে আছে শিক্ষার্থীরা। এমন নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অনেক শিক্ষার্থী। শহরের বাসাগুলোর পাশাপাশি চুয়েট সংলগ্ন পাহাড়তলী , ঊনসত্তর পাড়া, তাপবিদ্যুৎ এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মেস মালিকদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে।

বিশেষ করে প্রথম বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী এখনো আবাসিক হলের সুবিধা না পাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে বিভিন্ন মেস এবং তৎসংলগ্ন পাহাড়তলী ইউনিয়নের নানান জায়গায় মেস করে থাকতে হয়। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীরা বাসা ভাড়া মওকুফ কিংবা কিছু শতাংশ কম করার জন্য মেস মালিকদের সাথে কথা বলতে চাইলে মেসের কেয়ারটেকাররা এ বিষয়ে পুরোটা এড়িয়ে যান বলে জানা যায়।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,অনেক নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের হাত পাততে হয়েছে সুদদাতাদের কাছে। এদিকে অনেক বাসা মালিক টাকা পরিশোধের ব্যাপারে চলতি মাসসহ বকেয়া পুরো টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে,বিপরীতে বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা বললে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়ে পড়ে মালিকগণ।

চুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের অনেক শিক্ষার্থীই এমন অভিযোগ করেছে। চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম খুলসীতে এক ব্যাচেলর বাসায় ভাড়া থাকে এমন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চুয়েট শিক্ষার্থী এমন অনিয়মের শিকার হয়। তিনি চুয়েটনিউজ২৪ কে বলেন-টিউশন করে নিজের খরচ চালাতাম। মার্চের শেষ দিক থেকে লকডাউনের কারণে গ্রামের বাড়িতে অাছি।এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাসা ভাড়া ক্লিয়ার করেছি। ১৫ই জুন লকডাউনের খুলে দেওয়ায় বাসা ভাড়া পরিশোধের কথা জানালেন। এদিকে অামার টিউশন নেই,পরিবার চলছে বড় কষ্টে। তাই জুলাই মাস থেকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালাম। এতে কেয়ারটেকার একধরনের ক্ষেপে গেছেন। তারপর বললেন বাসা ছেড়ে দিলে মে,জুন,জুলাই তিন মাসের ভাড়া সম্পূর্ণ ক্লিয়ার করতে হবে।মালিকের সাথে অামি যোগাযোগ করতে চাইলে মালিকের কন্টাক্ট নাম্বার দিচ্ছে না। অর্ধেক টাকা পরিশোধ শেষ তবু অামাকে টাকার জন্য চাপাচাপি করছেন। অামি এখন নিরুপায়।

এদিকে চুয়েট নিকটস্থ মেসগুলোতে প্রায় ৫০ শতাংশই এমন অনিয়মে চলছে। ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন-
আমাদের  ব্যাচ এর প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী মেসে বা বাসা ভাড়া দিয়ে থেকে পড়াশোনা চালাতো।করোনার এই পরিস্থিতিতে সবাইকেই বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই আর্থিকভাবে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। অন্যদিকে এই সংকটাপন্ন অবস্থায় মেসের মালিকও অনেককে ভাড়া দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমিসহ অনেকেই ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এর সঠিক সুরাহা হবে।

এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মশিউল হক এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ইতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি জানান, মেস মালিকদের নাম-ঠিকানা পেলে আমরা শীঘ্রই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মেস মালিকদের সমন্বয়ে একটা সভার আয়োজন করব, যেখানে শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া মওকুফ বা ছাড়ের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।