মুমতাসিনের রন্ধনশিল্পেই “শৈলআঁখির রন্ধনশৈলী”র শুভযাত্রা

তাসনিয়া মাসিয়াতঃ

দিনাজপুরের মেয়ে মুমতাসিনের হাত ধরে সূচনা হয় “শৈলআঁখির রন্ধনশৈলী”র। বয়স তাঁর খুবই কম, মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পেরোনো একটি মেয়ে। অথচ রন্ধনশিল্পে তাঁর দারুণ নৈপুণ্য। ব্যবসার হালচাল, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তিনি খুব সুন্দরভাবেই আয়ত্ত্ব করতে পেরেছেন। ক্রেতাদের সাথে বোঝাপড়ায় তাঁর যেন জুড়ি মেলা ভার।
রন্ধনশিল্পে বাঙালী নারীদের নৈপুণ্যের প্রমাণ যুগ যুগ ধরেই পাওয়া যায়। মুমতাসিনের হাত ধরে “শৈলআঁখির রন্ধনশৈলী” যেন আবারো সেটি প্রমাণ করে দিল নতুন করে।

তাঁর স্বামী মোঃ মেছবাহুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একজন শিক্ষার্থী। মেছবাহুল হলে থাকাকালীন বাড়ির খাবার খেতে পারতেন না। হোটেলের খাবার খেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। পরবর্তীতে মুমতাসিন স্বামীর সাথে চুয়েট সংলগ্ন এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ঠিক তখনই সেই খাবারের সমস্যার কথা চিন্তা করেই মুমতাসিন সিদ্ধান্ত নেন চুয়েটের হলের শিক্ষার্থীদের জন্য হোমমেইড খাবারের প্রচলন শুরু করবেন।
তাছাড়া ঘরে বসে একাকী দিন কাটাতে ভালো লাগত না মুমতাসিনের। অতঃপর স্বামীর অনুপ্রেরণায় রান্নাবান্নার আয়োজনটি শুরু করেন। তিনি বলেন, “এটি মূলত আমার স্বামীর ব্যবসা, আমি খাবার প্রোডাকশন করি।”

লক্ষ্য ছিল খাবারের মান অক্ষুণ্ন রেখে স্বল্প মূল্যে শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ করা। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই “শৈলআঁখি’র রন্ধনশৈলী”-এর যাত্রা শুরু।

মুমতাসিন জানান, তাঁর স্বামী সবসময় ব্যবসায়িক চিন্তা ও কাজে যুক্ত থাকতে পছন্দ করেন। করোনার লকডাউনের দিনগুলোতে ঘরে বসে একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসে। যেই চিন্তা সেই কাজ। প্রায় শূন্য বিনিয়োগেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় তিনি অসাধারণ সাফল্য পান। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণাটা আসে এখান থেকেই।

শুরু থেকেই বাবার থেকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং সুবিধা পেয়েছেন মেহবাহুল। পরবর্তীতে ব্যবসার কাজে সহযোগী হন তাঁর সহধর্মিনী মুমতাসিন। দুজন মিলে হাতে হাত মিলিয়ে ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত করতে থাকেন।

স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার স্বামী আমাকে শতভাগ সাহায্য করে। একটা মানুষের পক্ষে নিজের কাজ গুলো করার পরে যেটুকু সময় থাকে তার ১০০ ভাগের মধ্যে ১০০ ভাগ সময়ই আমাকে দেয়।
তাঁর অনুপ্রেরণা ছাড়া আমার পক্ষে কোনো ব্যবসা করা সম্ভব না। আল্লাহ পাকের কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া, এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।”

“শৈলআঁখি’র রন্ধনশৈলী”র কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিন থেকেই এই উদ্যোগ ব্যাপক সারা ফেলে চুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত চুয়েটের শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসম্মত মানসম্পন্ন খাবার থেকে বঞ্চিত হয় প্রায় সময়ই। তাই হলে বসে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসম্মত বাসার খাবারের স্বাদ খুঁজতে শুরু করেন রন্ধনশৈলী’র রান্নায়।

এ , বি ও সি – এই তিন ক্যাটাগরিতে খাবারের তালিকা তৈরি করেছেন তাঁরা। সাধারণ খাবারসমূহ রয়েছে এ তালিকায় এবং কিছুটা ভিন্নধর্মী খাবারগুলো জায়গা করে নিয়েছে বি তালিকায়। যার যার স্বাদ ও সামর্থ অনুযায়ী সহজেই পছন্দের খাবারগুলো বেছে নিতে পারবে যে কেউ।
সকালের নাস্তার মধ্যে রয়েছে –
১। সবজি খিচুরী – ৫০ টাকা
২। ভেজিটেবল এগ ফ্রাইড রাইস – ৪০ টাকা
৩। বুটের বিরিয়ানি – ৫০টাকা
৪। মিনি চিকেন বিরিয়ানি -৬০ টাকা
৫। ভেজিটেবল এগ নুডুলস – ৩০ টাকা
৬। সবজি খিচুড়ি – ৫০ টাকা

রাতের ও দুপুরের খাবার –
১। রুই মাছ – ৬০ টাকা
২। রূপচাদা মাছ- ১০০ টাকা
৩। ছুরি মাছ – ৪০ টাকা
৪। বউ দুলালী মাছ – ৮০ টাকা
৫। মুরগি ভুনা – ৫০ টাকা
৬। গরুর মাংস ভুনা – ১০০ টাকা
৭। চুই ঝাল দিয়ে গরুর মাংস ভুনা – ২০০ টাকা
৮। মগজ ভুনা – ১২০ টাকা
৯। গরুর কলিজা ভুনা – ১০০ টাকা
১০। কাচ্চি বিরিয়ানি (গরুর মাংস) – ১৩০ টাকা
১১। মোরগ পোলাও – ১৮০ টাকা
১১। ডাল খিচুড়ি + মাছ ভাজা + ডিম ভাজা – ১০০ টাকা
১২। ডিম ভুনা – ৩০ টাকা

এই খাবারগুলোর মান রক্ষার জন্য তাঁরা বিশেষ নজর দিচ্ছেন। অত্যন্ত সুলভ মূল্যে শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ করছে রন্ধনশৈলী।
মূলত শিক্ষার্থীদের খাবারের অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই রন্ধনশৈলী’র এই ধরনের প্রশংসনীয় কার্যক্রম।

মুমতাসিন চান তাঁদের এই প্রতিষ্ঠানের নাম, খাবারের মান ও দামের কথা প্রত্যেকের মুখে মুখে প্রচলিত থাকবে। এই লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত দৃঢ় সংকল্পে কাজ করে যেতে চান। “শৈলআঁখি’র রন্ধন’শৈলী” চুয়েট গেটের সামনে না থাকলেও সকলের মনে তার নাম ও খাবারের স্বাদ গেঁথে থাকবে এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *