সহপাঠীর উপর হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন শিক্ষক রুম্মান, দুই বছরেও হয়নি বিচার

চুয়েটনিউজ২৪ ডেস্কঃ

সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রদের একটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শাফকাত আর রুম্মান নামক শিক্ষকের গভীর রাতে মদ্য পানে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩১ মে শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক চার ঘটিকায় শহীদ তারেক হুদা হলে এমন ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনা নতুন নয়, তিনি এর আগেও সহপাঠী হামলা সহ নানাবিধ কুকর্মের অভিযুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়।

বঙ্গবন্ধু জন্মদিন উপলক্ষে ২০২২ সালের ১৭ মার্চ চুয়েটের শেখ রাসেল হলে রাকিব উদ্দীন নামক এক শিক্ষার্থী উপর হামলা হয়। এ দিন সকালে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। এরই জের ধরে রাতে শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল ও শহীদ তারেক হুদা হলের বেশ কিছু শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শেখ রাসেল হলে প্রবেশ করে। এরপর চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাহিত্য বিষয়ক উপসম্পাদক রাকিব উদ্দীন চৌধুরীর উপর অতর্কিত হামলা করেন তারা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় হামলাকারীদের মধ্যে শাফকাত আর রুম্মানও ছিলেন। হামলায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয় রাকিব উদ্দীন। তৎক্ষনাৎ রাকিবকে চুয়েট মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় রাকিব উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমে নিজের বিবৃতিতে ১৭ ব্যাচের রুম্মানের নাম উল্লেখ করেন।

রাকিবের উপর হামলার দৃশ্য

 

হামলা শেষে হল থেকে বের হচ্ছে হামলাকারীরা
হল থেকে বের হচ্ছেন রুম্মান

১৮ মার্চ শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রনজিৎ কুমার সূত্রধরকে সভাপতি করে চার সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা রেজিস্ট্রার দপ্তর। যেখানে ঘটনার সাত দিনের মধ্যে কারণ উদঘাটন, দায়ীদের শনাক্তকরণ ও দোষের পরিমাণ নির্ধারণ পূর্বক একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। 

ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে অফিস আদেশের কপি

ঘটনার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্তের আদ্যোপান্ত প্রকাশ করে নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  এদিকে চুয়েটের রেজিস্ট্রার দপ্তরে খোজ নিয়ে যথাযথ কোনো তথ্যই পাওয়া যায় নি। তদন্ত রিপোর্ট সহ বিভিন্ন গোপন নথি যদি খামে করে কার্যালয়ে আসে তখন নিবন্ধন খাতায় সেসবের কোনো রেকর্ড রাখা হয় না বলে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন,

২০২২ এর মার্চের ঐ ঘটনার সময় রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন অধ্যাপক ফারুক-উজ-জামান স্যার। তখন আমার পোস্ট হয় নি। ঘটনার দীর্ঘ সময় ও এই ধরণের গোপন নথির কোনো ডকুমেন্ট না থাকায় বিস্তারিত জানা নাই আমার। তিনি আরও বলেন, সাধারণ এ ধরণের নথি গুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা শেষে হাতে হাতে একাডেমিক কাউন্সিলে হস্তান্তর করা হয়। 

এদিকে খোজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার দুই বছর পেড়িয়ে যাওয়ার পরেও ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ চিঠি কিংবা তদন্ত রিপোর্ট ছাত্রকল্যাণ দপ্তরেও জমা হয় নি।  ছাত্রাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভংগে জড়িত শাফকাত আর রুম্মানের তদন্ত রিপোর্ট ছাড়াই কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন তা নিয়েই প্রশ্ন ছুড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, এ সময় তদন্ত হওয়ার কথা। আমি তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো এরপর বিস্তারিত জানাতে পারবো।  উক্ত ঘটনায় যদি নির্দোষ থাকেন তবে সিসিটিভি ফুটেজে ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং আহত শিক্ষার্থীর বরাতে কিভাবে রুম্মান জড়িত হয় সেটিও তদন্তের বিষয়। যদি দোষী সাব্যস্ত হয়,তাহলে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উথ্থাপিত হবে। তবে এখন চলমান যে পরিস্থিতি সেটার বিষয়ে আগে গুরুত্ব তদন্ত ও সমাধান দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *