জারীন তাসমীন সাবা
হেমন্তের শেষে প্রকৃতি যখন সোনালি ঘাসের আবরণ সরিয়ে বিদায় নেয়, তখন ধীরে ধীরে আসে শীত। এটি কেবল একটি ঋতু নয়; এটি প্রকৃতির এক নতুন রূপে সজ্জিত হওয়ার সময়। হেমন্তের রোদেলা দিন পেরিয়ে যখন শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল বাংলার প্রকৃতিকে ছুঁয়ে যায়, তখন
সবকিছু যেন হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত, আরও মায়াবী।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাসও শীতের এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপকল্পে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাস যেন শীতের সকালে প্রকৃতির এক অতুলনীয় রূপমাধুরীর প্রতিচ্ছবি।
গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুতে সূর্যের আলো পড়ে মুক্তোর মতো চকচক করে। উঁচু-নিচু টিলার উপরে ভোরের কুয়াশা ঝুলে থাকে, যা চারপাশের সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তোলে।
যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সানিয়া বলেন, শীতকালের চুয়েট ক্যাম্পাস এক কথায় অপূর্ব! শিশিরভেজা পথে হাঁটতে গেলে দুপাশের কুয়াশায় থাকা স্নিগ্ধ প্রকৃতি সাথে আর সকালের কোমল রোদ এক অনন্য অনুভুতি দেয়।
শীত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের সাজসজ্জায়ও নিয়ে আসে ভিন্নমাত্রা। মাফলার, সোয়েটার, টুপি আর রঙিন জ্যাকেটের সমারোহে শিক্ষার্থীরা শীতকে স্বাগত জানায়। শীতের সকালের হিমেল বাতাসে মাঝে গোলচত্বর, পুকুর পাড় কিংবা কেন্দ্রীয় মাঠে শিক্ষার্থীদের আড্ডা জমে প্রাণের উষ্ণতা। এ সময়ে ক্যাম্পাসের চায়ের দোকানগুলো হয়ে উঠে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র। গরম চায়ের ধোঁয়ায় ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক উষ্ণ আমেজ।
উপকরণ এবং ধাতুবিদ্যাকৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী (২০২২-২০২৩) মোরসালিন হোসেন দ্বীপ বলেন, প্যারাময় প্রকৌশল জীবনের সব চাপ যেন মুহূর্তেই মুছে যায় যখন চুয়েটে শীতের সকালে প্রকৃতির মায়াবী চিত্রের সামনে এসে দাঁড়ায়। এত চাপ, এত ব্যস্ততার মাঝেও জীবন কত সুন্দর।
কাকডাকা ভোরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পথে হাঁটতে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম অনুভূতিই হলো শিশিরে ভেজা ঘাসের কোমল স্পর্শ। শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে প্রকৃতির দিকে।
যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পূর্ণিমা সাহা বলেন, শিশির ভেজা ঘাসের উপর লজ্জাবতীর পাতাগুলো যেন শীতের স্পর্শে লাজুক হয়ে আছে—চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব দৃশ্য।
শীত মানেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা মায়াবী সকাল। প্রতিটি আড্ডা, প্রতিটি উৎসব, প্রতিটি মুহূর্ত যেন বলে ওঠে—এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার, নিজের জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সময়। শীতের শীতল পরশে মোড়ানো চুয়েট ক্যাম্পাস তাই হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের স্মৃতিময় দিনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।