চুয়েট ক্যাম্পাস; নবীন শিক্ষার্থীদের অনুভূতি, স্বপ্ন ও বাস্তবতা 

আকিফা মনজুর তিশা:

স্নাতক পর্যায়ের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সবুজ স্বর্গ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রাঙ্গণ। চোখে মুখে উজ্জ্বলতা আর বুকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আজ জয়ী ভর্তিযোদ্ধারা নিজের স্বপ্নের শিক্ষাঙ্গণে।  প্রফুল্ল ও বুদ্বিদীপ্ত চেহারাগুলোতে ভেসে ওঠে আগামী দিনগুলোতে নিজের সাফল্যের গাঁথা রচনা করার অদম্য প্রেরণা। প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের সোনালি জীবনের পদযাত্রা শুরু করে।

রবিবার (২৭ অক্টোবর) ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। অগ্রজ শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানান। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নবীনরা নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ নিয়ে মনে মনে আঁকতে থাকেন নানা স্বপ্ন। কীভাবে কাটবে প্রথম দিন? কেমন হবে স্বপ্নের সেই ক্যাম্পাস? প্রথম প্রথম ক্লাস শুরু পর কেমন অনুভূতির মধ্য দিয়ে যান তারা? কি ই বা থাকে তাদের স্বপ্ন? তাদের মুখেই জানব তাদের এই মিশ্র অনুভূতিগুলো।

স্থাপত্য বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মেহেজাবিন হক আস্থা নতুন ক্যাম্পাস নিয়ে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন-“পরিবারের স্নেহমাখা আশ্রয় পেছনে ফেলে অনেক দূরে এসে দাঁড়িয়েছি চুয়েটে, নতুন এক পরিবেশে। চারপাশে অজানা মুখ, নতুন পরিচিতি—এ যেন এক নতুন জীবন, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে শিখছি, বেড়ে উঠছি। এ পথচলায় প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাকে নতুন করে গড়ে তুলছে, আর নতুন সম্পর্কগুলো সাহস দিচ্ছে এগিয়ে যেতে। এখানেই, এই ক্যাম্পাসে, আমার স্বপ্নের প্রথম পদক্ষেপ শুরু হচ্ছে—একটি নতুন অধ্যায়, হয়তো এখানেই আমার আত্ম-আবিষ্কার, হয়তো এখান থেকেই জীবনের অনন্ত পথে যাত্রা শুরু।”

পুরকৌশল বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাহছিন চৌধুরী বলেন,”বাসা থেকে প্রথম চুয়েটে আসার সময় উত্তেজনার পাশাপাশি একপাহাড় অনিশ্চয়তা সাথে নিয়ে আসি।দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি। এইটুকু বুঝতে পারছি যে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনার চাপ অনেক এবং ধীরে ধীরে এই চাপের তীব্রতা আরো বাড়তে চলছে। সারাদিন ক্লাস, ল্যাব শেষ করে করে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে যখন এই সুন্দর ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে যাই তখন একটু হলেও ক্লান্তি কমে যায়। সত্যি চুয়েট সুন্দর! চুয়েটে এসে আরেকটা বড় পাওনা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে আসা বন্ধুরা। দিন যতই ব্যস্ত কিংবা খারাপ যাক, বন্ধুদের কাছে আসলে সকল দুঃশ্চিন্তা হাসিতে উড়ে যায়। পরিশেষে এইটাই চাওয়া যে বাবা-মা র এবং নিজের স্বপ্ন যেন পূরণ করতে সক্ষম হই আমরা সবাই। সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যেন সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারি।”

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাওম আল ইরাম বলেন”হেমন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক লাবণ্যময়ী, ছায়া সুনিবিড় প্রাঙ্গনের পিচঢালা পথ ধরে হাটতে হাটতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নবীণ ছাত্র হিসেবে আমার আগমন। এইচএসসি পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জার্নি শেষে প্রায় দীর্ঘ সময়ের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতির স্নিগ্ধ মাধুর্যে অলঙ্কৃত এতো মনোমুগ্ধকর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন ছাত্র হিসেবে নতুন শিক্ষাজীবনে পদার্পণ নিঃসন্দেহে মনের অপ্রকাশিত অনুভূতিকে ব্যক্ত করে তুলে। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে, ব্যর্থতার বাঁশিতে সফলতার সুর আনতে, বিধ্বস্ত হৃদয়ে পরিকল্পিত আশার অট্টালিকা স্থাপনের যাবতীয় পরিকল্পনা রীতিনীতি শিখতে, সুদক্ষ নগর পরিকল্পনাবিদ হওয়ার সার্বিক প্রশিক্ষণ অর্জনে আগামী চার বছর এই নৈসর্গিক ভুবনে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো অতিবাহিত হবে বলেই প্রত্যাশা রাখছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *