আসহাব লাবিব:
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা আঘাত হানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। তলিয়ে যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি, নিঃস্ব হয়ে পড়েন হাজারো মানুষ। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যাটিতে ফটিকছড়ির মানুষের পাশে দাড়াতে এগিয়ে আসেন সারা দেশের জনগণ। কেউ ত্রাণ দিয়ে, কেউ আশ্রয় দিয়ে, কেউ বা আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সাহায্য করার চেষ্টা করেন বন্যার্তদের।
এই বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের এমনই একজন মোঃ নেজাম উদ্দিন। বয়সে ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে দিনমজুর নেজাম ও তার স্ত্রী থাকতেন ফটিকছড়ির সুন্দরপুরের ছোট একটি কুড়ে ঘরে। কিন্তু ২৪ এর বন্যায় তাদের মাথার ছাদ, ছোট সেই ঘরটিও নিঃশেষ হয়ে যায়।
এমন সংকটকালীন মুহুর্তে নেজামের পরিবারের পাশে দাঁড়ায় চুয়েটের আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউট স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার (এসিআই-চুয়েট)। সাময়িক সাহায্যের পরিবর্তে উক্ত পরিবারকে একটি ঘর বানিয়ে দিয়ে টেকসই সমাধান করার উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি।
শূন্য থেকে পরিবারটিকে সম্পূর্ণ নতুন একটি বাড়ি বানিয়ে দেন তারা। চুয়েটের পুরকৌশল ও স্থাপত্য বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ডিজাইন ও ব্যয় অনুমানের মাধ্যমে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় একটি তুলনামূলক টেকসই বাড়ির কাঠামো দাঁড়িয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাড়িটির কাজ পরিদর্শনে গত ৪ জানুয়ারি (শনিবার) ফটিকছড়ি যান এসিআই-চুয়েটের সদস্যরা। ঘরটি দেখতে তাদের সাথে যান চুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক
ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম, চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার ও সংগঠনটির বিভাগীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম।
উক্ত পরিদর্শনে গিয়ে মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছাত্রদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এই বয়সেই তারা সমাজের জন্যে এতো ভালো কাজ করেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে যেটি অত্যন্ত চমৎকার। আমি আশাকরি এসিআই এর মাধ্যমে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা এরকম ভালো কাজে আরো এগিয়ে আসবে এবং ভালো প্রকৌশলীর পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ঘরটি দেখতে পেরে আমার আসলেই ভালো লাগছে। এ কাজের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা একদিকে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে অন্যদিকে প্রকৌশলী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাকে আরো পাকাপোক্ত করছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি এ কাজের জন্যে অভিনন্দন জানাই।
নবনির্মিত ঘরের মালিক মো: নেজাম উদ্দিন বলেন, চুয়েটের ছোট ভাই আপুরা যেভাবে বিপদের সময় আমাদের পাশে দাড়িয়েছে সেটা আমরা কখনো ভুলব না। বন্যার পর আমাদের থাকার জায়গা ছিলনা। এখন আমাদের একটি নিজের ঘর আছে। এর পিছনে উনাদের পরিশ্রম আর অনেকদিনের প্রচেষ্টা রয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকব উনাদের জন্যে আমরা দোয়া করতে থাকব।
এসিআই-চুয়েটের বিভাগীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম বলেন, এই কাজের পিছনে নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া সবাইকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই৷ পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতার জন্যে ফটিকছড়ির উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার শিক্ষার্থীরা এভাবেই যেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষাটি ধরে রাখে।
সংগঠনটির সভাপতি জোহায়ের মাহতাব বলেন, আমরা এসিআই থেকে সবসময়েই এরকম ভিন্নধর্মী সেবামূলক কাজ করার চেষ্টা করি। কারিগরি কাজের পাশাপাশি এটিও আমাদের খেয়াল রাখা উচিত আমাদের আশেপাশের মানুষজন যাতে ভালো থাকে। হয়ত আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের কাজ বিস্তৃত নয় তবে আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যেতে চাই।
উল্লেখ্য, কনক্রিট মানোন্নয়ন ভিত্তিক পেশাজীবি প্রতিষ্ঠান এসিআই (আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউট)। এরই শিক্ষার্থীসুলভ একটি অংশ এসিআই স্টুডেন্ট চাপ্টার, চুয়েট। প্রতিষ্ঠার ৭ বছরে ক্লাবটির যেমন রয়েছে সেবামূলক কাজে সুনাম তেমনই রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অর্জন। সেই অর্জন ও সেবার ধারাই অব্যাহত রাখতে চান সংগঠনটির সদস্যরা।