জারীন তাসমীন সাবাঃ
পহেলা বৈশাখ, বাঙালির সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য প্রতিচ্ছবি। কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শুরু করে আজ তা বাঙালির ঐক্য, সম্প্রীতি ও নবজাগরণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই দিনে নতুন করে জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখে বাঙালি, আর এই উৎসবের রঙে মিশে থাকে ঐতিহ্য আর কৃষ্টির গভীর সুর।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে। দিনভর নানা অনুষ্ঠানে মুখরিত ছিল ক্যাম্পাস, যেখানে শিক্ষার্থীরা মেতেছিল ঐতিহ্যের আবাহনে।
সকালের সোনালী আলো ফোটার সাথে সাথেই, সকাল ৮টার দিকে চুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ছাত্রহল থেকে শুরু হওয়া এই র্যালি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে বাঁশির সুর আর “এসো হে বৈশাখ” গানের সম্মিলিত কণ্ঠধ্বনিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে।
দুপুরের ভোজে ছিল খাঁটি বাঙালি স্বাদ। হল গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবার – পান্তা ভাত, মাছ ভাজা এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী পদ, যা বৈশাখের আনন্দকে করেছিল আরও পরিপূর্ণ।
বিকেল বেলা চুয়েটের আকাশ সেজেছিল রঙবেরঙের ঘুড়ির মেলায়। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ঘুড়ি উড়িয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই ঘুড়ি উৎসব ছিল বৈশাখী উদযাপনের এক বিশেষ আকর্ষণ, যা সকলের মনে উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তোলে।
সন্ধ্যা নামতেই চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি ও জয়ধ্বনির উদ্যোগে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্যের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীল প্রতিভার স্বাক্ষর রাখে। এছাড়া ছিল আঞ্চলিক ভাষায় বিতর্ক। এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পুরো দিনের আনন্দকে এক সুন্দর সমাপ্তি দেয়।
চুয়েটের এই বৈশাখী উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবও সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ক্লাব সমূহের উদ্যোগে মেলায় বসেছিল নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্টল। বৈশাখের বিভিন্ন অনুষঙ্গ ও ঐতিহ্যবাহী দ্রব্যের প্রদর্শনীতে মুখরিত ছিল মেলা, যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই আয়োজনকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
নববর্ষের অনুভূতি ব্যাক্ত করে যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা খালিদ বিন শামস বলেন, অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে নববর্ষের আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ফুল, জুস, খাবারের আয়োজন অত্যন্ত সুন্দর ছিলো, সব মিলিয়ে উপভোগ করেছি।
সর্বোপরি চুয়েটে বাংলা নববর্ষ উদযাপন কেবল একটি গতানুগতিক উৎসব নয়, বরং এটি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই আয়োজন একদিকে যেমন নতুন বছরের স্বপ্নকে ধারণ করে, তেমনি অন্যদিকে ঐক্য ও সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকার বার্তা দেয় সকলকে।