নির্মাণের আড়াই বছরেও চালু হয়নি চুয়েট ক্যাফেটেরিয়া

চুয়েট নিউজ২৪ ডেস্কঃ

প্রায় আড়াই বছর পূর্বে নির্মাণকাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে না চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট) ক্যাফেটেরিয়া ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র(টিএসসি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও ক্যাফেটেরিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর নানান জটিলতা, আসবাবপত্র ও বাজেট সংকট, টিএসসির যাবতীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি।

শিক্ষার্থীরা জানান, বারবার প্রশাসনের নিকট ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি পুরোপুরিভাবে চালুর আবেদন করলেও শুধু আশ্বাসই পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি আমাদের সকলের জন্য এক আবেগের নাম।আমরা চাই এটি দ্রুত চালু হোক। এদিকে আড়াই বছরেও চালু না হওয়ায় টিএসসি চালুর দাবিতে চুয়েট শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন দেওয়াল চিত্র তৈরি করতে দেখা যায় ।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, “এই ভবনের নির্মাণকাজ অনেক আগে শেষ হলেও সেটি সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কিংবা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। সেই সাথে বিভিন্ন সংগঠনের অফিস কক্ষও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না।”

এদিকে বিগত আড়াই বছরে এই ক্যাফেটেরিয়া ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে  ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম, নানা সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করার অনুমতি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে ভবনটি থেকে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভবনটি এখনও তালাবদ্ধই থাকতে দেখা যায়।

চুয়েটের ক্যাফেটেরিয়া ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র চালু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম চুয়েট নিউজ২৪ কে বলেন, “ভাল মানের খাদ্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা কিছু দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব৷ আশা করছি আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই ভাল মানের খাদ্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে পারব৷”

উল্লেখ্য, ১৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় হয় প্রায় ১১ কোটি টাকা। পূর্ব পাশের তিনতলা অংশের নিচতলায় শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া, ২য় তলায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া এবং ৩য় তলায় সভা কর্নার। পশ্চিম পাশের ভবনের নিচ তলায় থাকবে স্টেশনারি দোকান। ২য় তলা বরাদ্দ হয়েছে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন কার্যালয়। ৩য় তলায় অবস্থিত কক্ষগুলোতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর অফিস হিসেবে বরাদ্দের প্রস্তুতি চলছে। ৪র্থ তলায় থাকছে চুয়েট মেডিকেল সহায়তা কেন্দ্র এবং এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন চুয়েট’র দপ্তর।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম এ প্রসঙ্গে চুয়েট নিউজ২৪ কে বলেন, “ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি চালুর মোটামুটি সব ধরনের প্রস্তুতিই সম্পন্ন। ভালোমানের খাদ্য পরিবেশক সেবা(ক্যাটারিং) এখনো পাওয়া যায় নি বিধায় ক্যাফেটেরিয়া চালু হতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি সবকিছু সমাধান করে খুব দ্রুতই এটি চালু করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, চুয়েটের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৭ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের জন্য প্রথম ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অর্থ দিয়ে ভবনের ভিত্তিকাঠামো নির্মাণ করা হয়।এরপর প্রকল্পের জন্য আর কোনো অর্থ বরাদ্দ না আসায় নির্মাণকাজ আর এগোয়নি। পরবর্তীতে আংশিক বাজেট এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন চুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অর্থায়নে ভবনটির নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়। নির্মাণকাজ একতলা পর্যন্ত সম্পন্ন করার জন্য সংগঠনটি প্রায় অর্ধ কোটি সমপরিমাণ টাকা অর্থায়ন করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় প্রকল্পটি শুরু হয়। কিন্তু ১ কোটি ১০ লাখ টাকার কাজ শেষ হওয়ার পর অধিদপ্তর থেকে আর কোনো টাকা আসেনি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়। এরপর নানান জটিলতা পর ২০১৯ সালের শুরু দিকে টিএসসির নির্মাণকাজ শেষ হয়।এরপর ভবনটি কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে চুয়েটের প্রকৌশল দপ্তর।

টিএসসি নির্মাণকাজ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত পেরিয়েছে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময়। বর্তমানে নির্মাণকাজ শেষ হবার পরেও তা চালু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *