চুয়েটের দুই ছাত্রকে নির্যাতন, সাত বছর পর সাবেক ৬ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

তানবির আহমেদ চৌধুরীঃ

২০১৮ সালে চাঁদার দাবিতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীকে বর্বর কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তৎকালীন ৬ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গত রবিবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াছমিনের আদালতে ভুক্তভোগী জামিল আহসান এবং মাহমুদুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। জামিল ও মাহমুদুল উভয়েই চুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

মাহমুদুলের করা মামলায় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের, সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন (প্রকাশ সম্রাট), সাংগঠনিক সম্পাদক অতনু মুখার্জী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিলয় দে এবং জামিল আহসানের করা মামলায় এ ৪ জন সহ সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান ফরহাদ ও ফখরুল ইসলাম ফাহাদসহ আরো অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মাহমুদুল ইসলাম তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ২০১৮ সালের ১৪ মে অভিযুক্ত বাকের ও সম্রাট তাকে শিবিরের নেতা আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে ১৯ মে রাত ১টায় অভিযুক্তরাসহ ১০ থেকে ১৫ জন আবাসিক হলে তাঁর রুমে গিয়ে ভাঙচুর করে সকল শিক্ষা সনদ এবং ১৫ হাজার টাকার জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। সনদগুলো ফেরত পেতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করে বিরোধ সমাধানের উপদেশ দেন। পরে তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নির্দেশনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তাঁরা তাকে বেদরম মরধর করে। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা বাদীর বাবাকে ফোন করে বাদীর কান্না শুনিয়ে তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই সময় জীবন বাঁচাতে এক সপ্তাহের সময় চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও পরে টাকা দিতে না পারায় ভয়ে মাহমুদুল ইসলাম আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। এতে তার ছাত্রজীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসন থাকায় গত ৭ বছর কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলেও অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন তিনি।

আরেক মামলার অভিযোগপত্রে বাদী জামিল আহসান দাবি করেন, একই পদ্ধতিতে তার কাছেও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল অভিযুক্ত বাকের ও সম্রাট। কিন্তু এত টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে গেলে পরীক্ষা শেষ করা মাত্র তাকে তুলে নিয়ে ছাত্র সংসদে আটকে রেখে লোহার রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প দিয়ে তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান অভিযুক্তরা। মারধরে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আবারও মারধর করে তাঁরা। তারপর বাদীর সামনে ছুরি রেখে ছবি তুলে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে রাউজান থানায় সোপর্দ করে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতারা। ওই মামলায় তিন মাস কারাভোগ করতে হয় তাকে। এই হয়রানির কারণে তারও শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মামলায় তিনি দাবি করেন।

এ ঘটনার ভুক্তভোগী জামিল আহসান চুয়েটনিউজকে বলেন, চাঁদা দিতে না পারায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার ওপর নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এমনকি তাঁরা আমাকে শিবির আখ্যা দিয়ে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে থানায় দেয়। এ নির্যাতনের ব্যাপারে তখন প্রশাসন অবগত থাকলেও তাঁরা কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। অভিযুক্তরা এতোদিন ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে নিজেদের অনুগত করে রেখেছিলো বিধায় আমি মামলা করতে পারিনি। আমার সাথে হওয়া প্রতিটি জুলুমের ন্যায় বিচার চাই আমি। সেই সাথে চুয়েট প্রশাসনকেও বলতে চাই, তাঁরা যেন কখনো ক্ষমতার কাছে মাথা নত না করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।

মামলার আইনজীবী ইমরানুল হক বলেন, গত রবিবার মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়াকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *