আসহাব লাবিব, ফাইয়াজ মোহাম্মদ কৌশিক:
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও এ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে সাড়া দিয়ে গত (২৫,২৬ ও ২৭ জুন) অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এসময় পুরোপুরি বন্ধ থাকবে ক্লাস-পরীক্ষা।
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার এই ঘোষণায় অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চুয়েটে বর্তমানে ‘২১ ব্যাচের সকল বিভাগের ও ‘২০ ব্যাচের দুইটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা চলমান আছে। এমতাবস্থায় উক্ত আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে তাদের পড়ালেখার উপরও প্রভাব পড়ছে। সর্বপরি শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পূর্বনির্ধারিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা হবে কিনা সেই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব নাবিল বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবির সাথে আমরা সম্পূর্ন একমত। শিক্ষকরা দেশের কল্যাণে কাজ করতে চান। তারা যৌক্তিক দাবি নিয়েই আন্দোলন করছেন। তবে আমাদেরও পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় আমরাও দোটানার মধ্যে পড়ে আছি পরীক্ষা হবে কিনা। সেজন্য বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। যদি এক্সাম না হয় তাহলে আমাদের আগে থেকেই জানালে ভালো হবে।
ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সীমান্ত রায় বলেন, পরীক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। আগেও একটি দুর্ঘটনায় আমাদের পরীক্ষা প্রায় ১ মাস পিছিয়েছে। তাও সব প্রতিকূলতা শেষে আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের এই আন্দোলন আমাদের পরবর্তী পরীক্ষাগুলোকে অনিশ্চয়তার ফেলে দিয়েছে। স্যারদের পক্ষ থেকেও তেমন কিছু পরিষ্কারভাবে বলা হয় নি। এমতাবস্থায় আমরা পড়াশুনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছি না।
এসব জানতে চাইলে চুয়েটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. বদিউস সালাম বলেন, যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নির্দেশনা আসে যে পরীক্ষা স্থগিত করে সময় পুননির্ধারণ করা হবে তাহলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তবে বিভাগীয় প্রধান থেকে নির্দেশনা আসার আগে পরীক্ষা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত আমরা দিতে পারবো না।
চুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম চুয়েট নিউজ ২৪ কে বলেন, আমরা শিক্ষকরা সবসময় চাই যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক দিক দিয়ে একদিনও না পেছায়। আমরা অনেকটা জোর করেই সবসময় ওদের ক্লাস-পরীক্ষা সময়ের মধ্যে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদেরকে এই পদক্ষেপগুলো নিতে বাধ্য করেছে। তবে আমরা আশাবাদী সরকার খুব শীঘ্রই আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।
আন্দোলন চলাকালীন সময়ে পরীক্ষা হবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে একাত্মতা রেখে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ৩০ তারিখ আমাদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি অনুষ্ঠিত হবে; তবে নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। সেদিনো যদি আমাদের দাবি না মানা হলে আগামী ০১ জুলাই থেকে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা সহ সকল একাডেমিক ও ননএকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করবো।
উল্লেখ্য, গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। এবছর গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যাঁরা নতুন যোগ দেবেন, তাঁরা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।
এহেন সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ স্বরুপ এতদিন যাবৎ মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করেছেন চুয়েটসহ সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।