পরীক্ষার শেষ মুহূর্তে ভালো পড়াশোনার কার্যকারিতা বেড়ে যায় কেন?

জারীন তাসমীন সাবাঃ

পরীক্ষার পূর্বে প্রস্তুতি গ্রহণের সময় অনেকেই লক্ষ্য করেন, শেষ মুহূর্তে পড়া মুখস্থ করার ক্ষমতা যেন বহুগুণে বেড়ে যায়। দুটো পরীক্ষার মাঝে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান থাকলেও পরীক্ষার আগ মূহুর্তে, শেষের দিনে পড়ার কার্যকারিতা বেড়ে যায়। শুরুর দিনগুলোতে শত চেষ্টা সত্ত্বেও এই কার্যকারিতা দেখা যায় না। অনেকের কাছে ব্যাপারটি স্বাভাবিক মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে শেষ মুহূর্তে পড়া কার্যকর মনে হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

চাপের পরিস্থিতিতে এড্রেনালিনের ভূমিকাঃ

পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসে, ততই শরীর এবং মস্তিষ্কে চাপ বেড়ে যায়। এই চাপের প্রতিক্রিয়ায় নিঃসৃত হয় এড্রেনালিন, যা মস্তিষ্ককে সজাগ করে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এই এড্রেনালিনের প্রভাবে মস্তিষ্ক দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী করার দিকেও মনোযোগী হয়।

এছাড়া এসময়ের চাপটিকে প্রোডাকটিভ চাপও বলা হয়। উদ্ভুত চাপের উপস্থিতি মস্তিষ্ককে আরও কার্যকরীভাবে কাজ করতে বাধ্য করে। এই কারণেই শেষ মুহূর্তে পড়া দ্রুত আয়ত্ত করা সম্ভব হয়।

সময়ের স্বল্পতায় ক্রামিং এফেক্টের প্রভাবঃ

গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের স্বল্পতার কারণে মস্তিষ্ক জরুরি মনোযোগ সহকারে কাজ করে, যা এটিকে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ এবং মনে রাখতে সহায়তা করে। এই প্রক্রিয়াটি ক্রামিং এফেক্ট নামে পরিচিত। যদিও নিয়মিত পড়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি খুব বেশি কার্যকর নয়, তবে পরীক্ষার আগে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মস্তিষ্কের চিন্তা প্রক্রিয়ায় ফোকাসড এবং ডিফিউজ মোডঃ

মস্তিষ্কের চিন্তার প্রক্রিয়ার দুটি ধরণ রয়েছে। একটি হলো ফোকাসড মোড অপরটি ডিফিউজ মোড।

ডিফিউজ মোড মূলত পড়ার শুরুর দিকে সক্রিয় থাকে। নতুন ধারণা গড়ে তোলার জন্য এবং গভীরভাবে বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

অপরদিকে, ফোকাসড মোড পরীক্ষার আগে সক্রিয় হয়। এই মোডে মস্তিষ্ক সরাসরি সমস্যা সমাধান এবং তথ্য মুখস্থ করার দিকে মনোযোগ দেয়।

যখন শুরুর দিকে ডিফিউজ চিন্তা করে তখন ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হয়। পরবর্তীতে ফোকাসড চিন্তায় মনোযোগ দেওয়া হয়, তখন তথ্য মনে রাখা এবং আয়ত্ত করা আরও সহজ হয়।

অসমাপ্ত কাজ মনে রাখায় জেইগারনিক প্রভাবঃ

জেইগারনিক প্রভাব অনুযায়ী, মস্তিষ্ক অসমাপ্ত কাজগুলোকে বেশি মনে রাখার চেষ্টা করে। পরীক্ষার আগে যখন অনেক বিষয় অসম্পূর্ণ থাকে, তখন মস্তিষ্ক সেগুলো দ্রুত আয়ত্ত করতে তৎপর হয়। এতে শেষ মুহূর্তে পড়াগুলো বেশি কার্যকরভাবে মুখস্থ হয়।

এই প্রভাবগুলো পড়াশোনায় কাজে লাগানো মাধ্যমে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। তবে, প্রয়োজন কিছু পদক্ষেপ। যেমনঃ

১. ছোট ডেডলাইন তৈরি করাঃ

বড় বড় পড়ার পরিবর্তে প্রতিদিনের পড়ার জন্য নির্দিষ্ট ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ডেডলাইন তৈরি করতে হবে। এটি মস্তিষ্ককে সঠিক সময়ে পড়া সম্পূর্ণ করতে সহায়তা করে এবং শেষ মুহূর্তের চাপ কমায়।

২. রিভিশনেরর অভ্যাস গড়ে তোলাঃ

প্রতিদিন পড়া শেষ করার পর তা রিভিউ করার জন্য কিছু সময় রাখা উচিত। এটি মস্তিষ্কে আরও দৃঢ়ভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে। প্রতি দুই দিনে বিষয়গুলো পুনরায় ঝালাই করার অভ্যাস তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ফোকাসড এবং ডিফিউজ চিন্তার ভারসাম্য বজায় রাখাঃ

প্রথমে ডিফিউজ চিন্তা ব্যবহার করে পড়া বুঝতে হবে। এটি বিষয়বস্তুর গভীরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। পরে ফোকাসড মোডে পড়া মুখস্থ করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের উভয় প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে আরও বেশি তথ্য আয়ত্ত করা সম্ভব।

৪. মূল পরীক্ষার পূর্বে টেস্ট বা মক পরীক্ষা দেয়াঃ

পরীক্ষার আগে একটি মক টেস্ট দিলে মস্তিষ্ক প্রস্তুত হয়ে যায় এবং অসম্পূর্ণ বিষয়গুলো সহজে মনে রাখতে সাহায্য করে।

৫. শেষ মুহূর্তের সুবিধাকে ব্যবহার করাঃ

পরীক্ষার ঠিক আগে যেহেতু মস্তিষ্ক সবচেয়ে সক্রিয় থাকে, তখন কঠিন বিষয়গুলো পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এই সময়ে পড়াগুলো দীর্ঘমেয়াদে মনে রাখার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *