ক্যাফেটেরিয়ার মান উন্নয়নে আশ্বাস, মিলবে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ

আসাদুল্লাহ আল গালিব:

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান, দাম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল। পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এর পরিবর্তন হলেও দৃশ্যপট এর কার্যত কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে প্রতিনিয়তই উঠছে অভিযোগ। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ২৬ জুন বিকেলে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কস্তুরী রেস্তোরাঁ’র সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এক বৈঠকের আয়োজন করে ছাত্রকল্যাণ দপ্তর ।

ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বর্তমান সেবাব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, খাবারের মানের উন্নতি হয়নি এবং ডিমভাজিসহ কিছু খাবারের দাম আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়ার শৌচাগার এর পরিচ্ছন্নতা নিয়েও উঠে আসে নানা অভিযোগ।

এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে মালিকপক্ষ খাবারের দাম সমন্বয় করার আশ্বাস দেয়। একইসাথে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রতিদিন তিনবার শৌচাগার পরিষ্কার করার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দেয়।

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান মাহির বলেন, “ছাত্রকল্যান দপ্তরের সমন্বয়ে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার মালিকপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এধরনের মতবিনিময় সভা ক্যাফেটেরিয়ার মানোন্নয়ন এর জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। মালিকপক্ষের আন্তরিকতা , পরিকল্পনা এবং পার্ট টাইম জব সৃষ্টির মত চিন্তাভাবনা গুলো প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে উঠবে।”

যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থ আহনাফ শাহরিয়ার অর্ণব বলেন, “একজন চুয়েটিয়ান হিসেবে আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান ও দামের বিষয়ে প্রশাসন বাস্তবসম্মত এবং ছাত্রবান্ধব সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের দেশের অন্যান্য পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠানে অনেক কম দামে তুলনামূলক ভালো মানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যদি তারা এই দামে ভালো খাবার দিতে পারে, তাহলে চুয়েটের মতো একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা সম্ভব নয়—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং আমাদের উচিত হবে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার দামের সাথে তুলনা করে সেভাবেই আমাদের ক্যাফেটেরিয়ার দাম নির্ধারণ করা।”

এছাড়াও খাবার সংগ্রহ ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জানানো হয়, খুব শিগগিরই অনলাইনের মাধ্যমে খাবার অর্ডার ও পরিশোধের সুবিধা চালু হবে। চুয়েট শিক্ষার্থীদের তৈরি ‘ফুডিওগ্রাম’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সরাসরি খাবার সংগ্রহের ক্ষেত্রে আগের হাতে লেখা রশিদের পরিবর্তে প্রিন্টেড ডিজিটাল রশিদ চালুর সিদ্ধান্ত হয়। খাবার হলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডেলিভারি ব্যবস্থাও চালু করার বিষয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। হিসাব বিভাগে খন্ডকালীন কাজের সুযোগে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপ পরিচালক অধ্যাপক মো: মুক্তার হোসেন বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ পায়। আমাদের দেশে এই চিত্রটি এখনও খুব একটা দেখা যায় না। কস্তুরী রেস্তোরাঁর মালিকপক্ষ সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থী”দের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলোর প্রতি মালিকপক্ষ আন্তরিকতা দেখিয়েছে। ক্যাফেটেরিয়া এর অব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী এর অভিযোগ থাকলে সেটি যেন তারা প্রথমেই আমাদের কাছে জানায়। পাশাপাশি আমরাও ক্যাফেটেরিয়ার সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *