সাময়িক বহিষ্কার মদপানে অভিযুক্ত সেই শিক্ষক, স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি শিক্ষার্থীদের

চুয়েটনিউজ২৪ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর শহীদ তারেক হুদা হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মদপান এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক শাফকাত আর রুম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি মধ্যরাতে ছেলেদের হলে প্রবেশ করে ছেলেদের মারধর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তার স্ত্রী চুয়েটের আরেক প্রভাষক গাজী জান্নাতুল ফেরদৌসকেও।

গত ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিষ্কারাদেশের কথা জানানো হয়। জানা যায়, বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা- ২০১৮ মোতাবেক অভিযুক্ত পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক শাফকাত আর রুম্মান ও তার স্ত্রী ইলেকট্রনিকস ও টেলিযোগাযোগ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক গাজী জান্নাতুল ফেরদৌসকে  চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। আরো জানানো হয়, আপিলের ভিত্তিতে উক্ত বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে। 

এদিকে উক্ত শাস্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, মদ্যপ শিক্ষক শাফকাত রুম্মানের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শাস্তি হিসেবে তাকে এবং তার স্ত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার দেয়া হয়েছে। যাতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী খুবই আশাহত হয়েছি। আমরা এই ঘৃণিত কাজের জন্য শাফকাত আর রুম্মানের আজীবন বহিষ্কার চেয়েছিলাম। কিন্তু চুয়েট প্রশাসনের প্রতি আমরা আশাহত। চুয়েট প্রশাসনের এমন সাময়িক বহিষ্কার শাস্তি দিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে এবং নিরপেক্ষ অবস্থান প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু মাহদী চৌধুরী বলেন, শিক্ষক তো শুধু পাঠদান করবেন এমনটি নয়। শিক্ষক থেকে আমরা নৈতিকতাও শিখি। এমন গর্হিত কাজ যে শিক্ষক করেছেন তার আরো কঠোর শাস্তি আমরা প্রত্যাশা করি যাতে সামনে আর এমন ঘটনা না ঘটে।

এদিকে পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল বলেন, এরকম কোনো চিঠি আমরা পাই নি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে এই ধরনের কিছু হয়েছে আমি যতটুকু জানি। তবে কোনো চিঠির কপি আমার কাছে আসে নি।  তবে আমি এটা আগেও পরিষ্কার করেছি যে শৃঙ্খলাবিধি, চাকুরিবিধি, ছাত্রবিধি তদন্ত কমিটি অনুসারে যেভাবে আসবে, সেই অনুসারে তার বিরুদ্ধে যেকোনো শাস্তি দিতেই পারে। প্রশাসনিক পদ্ধতির তদন্তে যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে শাস্তি নেয়া যাবে। কেউ তো শৃঙ্খলার বাইরে না। শিক্ষক, কর্মকর্তাদের চাকরি বিধি, শৃঙ্খলাবিধি মেনেই চলতে হবে।  তাছাড়া চুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, এখনো আমাদের কাছে চিঠি আসে নি। চিঠি আসলে আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারব।  

সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া বলেন, তদন্ত কমিটি বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সিন্ডিকেট তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাঁরা চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আপিল করতে পারেন। এর শুনানি শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর যে কেউ যেকোন অপরাধে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাময়িক বহিষ্কার ও আপিলের ব্যপারে অভিযুক্ত শিক্ষক শাফকাত আর রুম্মান ও গাজী জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে কথা বললে তারা জানান, তারা তাদের জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দিয়েছেন। এই ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।  

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ মে (শুক্রবার) চুয়েটের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টের একপর্যায়ে দিবাগত রাত চারটায় শহীদ তারেক হুদা হলে কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে মদ পানরত অবস্থায় ছিলেন পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক শাফকাত আর রুম্মান। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনা স্থলে পৌঁছান। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে মদ পানরত অবস্থায় স্বামীকে দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ও উপস্থিত সবাইকে বকাঝকা, এমনকি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি হলের নিচে নেমে রাস্তায় আহাজারি করতে থাকেন। পরে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জান্নাতুলকে শান্ত করেন ও ওই শিক্ষককে ধরাধরি করে শিক্ষক ডরমিটরিতে পৌঁছে দেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে শহীদ তারেক হুদা হলের তখনকার প্রাধ্যক্ষ নিপু কুমার দাসের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের কাজ শুরু হয়। 

প্রায় এক বছর আগে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বারবার যথাযথ বিচার দাবি করলেও দীর্ঘদিন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় চুয়েট প্রশাসনের বিরুদ্ধে দ্বৈতনীতির অভিযোগ তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত মাসের সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে শিক্ষক শাফকাত আর রুম্মানকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *