নাফিসা নাওয়ারঃ
ঢাকায় প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা এবং কতিপয় পলিটেকনিক শিক্ষার্থী কর্তৃক ধর্ষণ ও বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকির প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
আজ ২৯ আগস্ট (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর থেকে প্রায় ২০০ মশাল নিয়ে এই মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা মিছিলে ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘২৪ এর বাংলায়, ডিপ্লোমা কোটার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, প্রকৌশল সমাজ জেগেছে’, ‘১,২,৩, ৪ ডিপ্লোমা তুই কোটা ছাড়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’ শীর্ষক স্লোগান দেন। পরবর্তীতে তারা মিছিল শেষে চুয়েটের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
এসময় পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ঢাকার পলিটেকনিকের সাবেক ছাত্র সালমান তালিম কর্তৃক বুয়েট ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করার প্রতিবাদস্বরূপ আমাদের এই মশাল মিছিল।২৭ আগস্ট ঢাকায় আমরা যারা শান্তিপূর্ন সমাবেশে গিয়েছিলাম সেখানে পুলিশ টিয়ারশেল সাউন্ড গ্রেনেডসহ আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা যোগ্য দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম, যোগ্যরা যেন দেশের যোগ্যস্থানে বসে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চুয়েট শিক্ষার্থীরা ৩৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছি এবং সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে শাহবাগে ব্লকেড করেছি। যদি দরকার হয় আমরা আবারো ঢাকা ব্লকেড করব এবং কঠিন থেকে কঠিন কার্যক্রম ঘোষণা করব।
যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহি আল ওয়াহিদ বলেন, আমরা প্রকৌশলী, আমরা সমাজ গড়ার দায়িত্বে থাকি। আমরা ক্লাস বন্ধ করে বসে থাকতে চাই না। আমরা ইন্টেরিমকে বলতে চাই আমরা দ্রুত আমাদের ক্লাসে ফিরে যেতে চাই, এজন্য আমাদের যে নৈতিক দাবি সেটা যেন মেনে নেয়।
পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. রাসেল রানা বলেন, পুলিশ কর্তৃক আমাদের প্রকৌশলী ভাইবোনদের উপর যে হামলা করা হয়েছে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে অনুরোধ করব আমাদের প্রকৌশলীদের অধিকার ও সম্মান যেন রক্ষা করা হয় এবং তাঁর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি আজকে একটি নিউজ পড়লাম যে আমাদের মেয়ে শিক্ষার্থীদের কেউ একজন খুবই বাজেভাবে কথা বলেছে। কথাগুলো সকলেই জানেন, আমি সেগুলো বলতে চাচ্ছি না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি সরকারকে বলব এর সাথে যারা জড়িত ও একইসাথে পুলিশ আক্রমণের সাথে যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
জানা যায়, গত বেশ কয়েক মাস ধরে চাকরিক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের বৈষম্যের প্রতিবাদে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন চুয়েট সহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ আগস্ট (বুধবার) ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। এক পর্যায়ে সরকার থেকে কোনো সমাধান না আসায় শাহবাগ থেকে যমুনা অভিমুখে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি সমূহ ছিলো- নবম গ্রেডে নূন্যতম যোগ্যতা বিএসসি রেখে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ, দশম গ্রেডকে কোটামুক্ত করে বিএসসিদের জন্য সুযোগ করে দেয়া এবং বিএসসি ছাড়া যেন কেউ প্রকৌশলী পদবী ব্যবহার না করতে পারে তা নিশ্চিত করা।