ফাইয়াজ কৌশিকঃ
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে। কারো চোখ মনিটরে নিবদ্ধ, কেউ আবার ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ নিয়ে ব্যস্ত গবেষণায়। সমাধানের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে সাতটি জটিল সমস্যা। সময় মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। কেউ ইতোমধ্যে এগিয়ে গেছে কয়েক ধাপ, কেউ এখনও লড়াইয়ে ব্যস্ত। ক্লান্তি নেই কারো চোখে-মুখে, বরং টানটান উত্তেজনায় মুখর চারপাশ।
কে প্রথম শেষ করবে? কে আজ জয় করবে “টেক যুদ্ধের রাজমুকুট”?
এই চিত্র দেখা গেল আজ ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর ভবনে, যেখানে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী প্রযুক্তি উৎসব “এমআইই ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেক কার্নিভাল ২০২৫”। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে দুইদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি।
উৎসবটির প্রথম দিন আয়োজন করা হয়েছে টেকাথন প্রতিযোগিতা। হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বিত এ প্রতিযোগিতায় চুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়েছে মোট ১৭ টি দল। পাশাপাশি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে “ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ফর গার্মেন্টস” শীর্ষক একটি সেমিনার। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া। উক্ত সেমিনারে কী-নোট আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাউদার্ন আইওটি লিমিটেড-এর সিটিও মো. আরিফুল ইসলাম।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে থাকবে মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ। জানা যায়, সেদিন সাউদার্ন আউওটি লিমিটেড চুয়েটের স্নাতক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের দেবে সরাসরি চাকরিতে যোগদানের বিশেষ সুবিধা। সেখানে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইই বিভাগের পাশাপাশি তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল, কম্পিউটার ও বিজ্ঞান কৌশল এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবে।
এই উৎসবে আয়োজিত টেকাথনে অংশগ্রহণকারী চুয়েটের মেকাট্রনিক্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী অংকন দে অনিমেষ চুয়েটনিউজ২৪ কে বলেন, আজ চুয়েটে বেশ সৃজনশীল একটা আয়োজন হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ধরনের আয়োজন খুব বেশি ঘটে না, কিন্তু ঘটা উচিত। আমরা অনেকে কোডিং করি, হার্ডওয়্যার নিয়েও কাজ করি। কিন্তু এখানে এ দুটোকেই একত্র করে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আর প্রতিযোগিতায় সমাধানের জন্য প্রদত্ত সমস্যাগুলোও বাস্তবভিত্তিক। এগুলোকে ধাপে ধাপে সমাধান করতে হচ্ছে। এ ধরনের আয়োজন আরো বেশি বেশি করা উচিত, তাহলে আমরা আরো শিখতে পারব
জটিল সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী তাসনিম জসীম নাবিলা বলেন, সমস্যা গুলো বেশ জটিল। আমাদের টিমের নাম এম্পটি ফোল্ডার। যদিও এম্পটি না হয়ে আমরা ইতোমধ্যেই তিন থেকে চারটা ধাপ প্রায় সমাধান করে ফেলেছি। তবে এখন কিছুটা কঠিন লাগছে। দেখা যাক কতদূর যেতে পারি।
উৎসবটির অন্যতম আয়োজক এমআইই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, এমআইই রোবল্যুশন এর দেড়মাসের ব্যবধানে আরেকটি জাতীয় পর্যায়ের আয়োজন করা নিঃসন্দেহে একটি অসাধ্য কাজ ছিল। আর সেই অসাধ্যকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে এমআইই বিভাগ। সাউদার্ন আইওটি-এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথমবারের মতো এমআইই টেক কার্নিভাল -২০২৫ আয়োজিত হয়েছে যাতে রয়েছে লক্ষ টাকার পুরষ্কার। এছাড়াও দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকাথন আজই অনুষ্ঠিত হলো। এমন আয়োজনের একজন সংগঠক হিসেবে নিজেকে গর্বিত ও সৌভাগ্যবান মনে করছি।
এমআইই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. প্রসেনজিত দাস বলেন, এর আগেও আমরা টেকাথন আয়োজন করেছিলাম। আমাদের মূল উদ্দেশ্য শিল্প ক্ষেত্রের ব্যবহারিক জ্ঞান এই প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করে তা শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। শিল্প কারখানার সাথে তাদের কিভাবে আরো বেশি যোগাসাজস তৈরি করা যায়, আরো সম্পর্ক বাড়ানো যায় তা করা। এটা যত বেশি করা যাবে, তত আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যই ভালো। এতে ওরা ভবিষ্যতের জন্য চাকরিক্ষেত্রের ব্যাপারে একটা ধারণা পাবে।
উল্লেখ্য, এ আয়োজনে টেকাথন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় টিম হাইপার থ্রেড। প্রথম রানার আপ হয় এনএসডব্লিউ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রানার আপ যথাক্রমে টিম সিন্টেক্স ইরর ও মেভেরিক্স। আরও জানা যায়, এমআইই বিভাগের এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে “সাউদার্ন আইওটি লিমিটেড” ও মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে চুয়েটনিউজ২৪. কম।