চুয়েটে তাপসী রাবেয়া হলে পানি সংকটে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

জারীন তাসমীন সাবা:

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর তাপসী রাবেয়া হলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান পানি সংকট শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দিন দিন বাড়ছে।

হলবাসী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণে ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়া যায় না। এমনকি গোসল, টয়লেট ব্যবহার, খাবার খাওয়ার পর হাত ধোয়া কিংবা ওজুর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্থাপত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত ই নুর বলেন,
“প্রতিদিন দুপুরের ব্যস্ত সময়ে হলে একদমই পানি পাওয়া যায় না। এ সময়টাতে গোসল, ওজু কিংবা হাত-মুখ ধোয়ার মতো সাধারণ কাজও করা যায় না। বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

গ্রীষ্মকালে পানি সংকট আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছে। অনেক সময় এক-দুইটি ব্লকে সামান্য সময়ের জন্য পানি এলেও তা অস্বচ্ছ ও ময়লাযুক্ত, যা ব্যবহার অনুপযোগী। অন্যদিকে, অধিকাংশ ব্লকে একেবারেই পানি থাকছে না দিনের পর দিন।

পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা দত্ত প্রিয়া বলেন,
“প্রচণ্ড গরমে তাপসী রাবেয়া হলে পানির এই সংকট আমাদের চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। স্নান বন্ধ, বাথরুম ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খাবার পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাচ্ছি।”

ছাত্রীরা জানান, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কর্তৃপক্ষ প্রায়ই সমস্যার কারণ হিসেবে মূল পানির সরবরাহ লাইনে জটিলতা ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কথা জানায়।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রোকসানা আরা নিলু বলেন,
“আমরা প্রতিনিয়ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। লোকজন এসে কাজ করছে, আমি তাদের দোষ দিতে পারি না। এটা একটি কঠিন পরিস্থিতি, এবং আমরা সমাধানের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগে, মেয়েরা এত গরমে কষ্ট পাচ্ছে দেখে।”

শুধু দৈনন্দিন জীবন নয়, এই সংকট শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি আর না হয়, তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *