ফাইয়াজ মুহাম্মদ কৌশিকঃ
বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনের তিন দফা দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন চুয়েট, চবি, আইআইইউসি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার, বিকাল ৪ টায়, নগরীর দুই নং গেইট এলাকায় তারা এই প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করেন।
এসময় বিক্ষোভ মিছিলে হাজারো শিক্ষার্থীদের ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা, মেধা’, ‘কোটার নামে বৈষম্য, চলবে না, চলবে না’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, কোটাপ্রথার সংস্কার’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
২ নং গেইট থেকে মিছিল শুরু হয়ে জিইসি মোড় ঘুরে আবার উৎপত্তিস্থলে ফেরত আসে। এরপর অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। এসময় তারা তাদের পূর্বে উথ্থাপিত তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। যেমন- প্রকৌশল নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী হওয়া, কারিগরি দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করা এবং বিএসসি ডিগ্রীধারী ব্যতীত অন্য কেউ ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেনা মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করা। এই তিন দফা দাবি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
তাঁদের মতে, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারীরা পদোন্নতি ও নিয়োগে ন্যায্যতা থেকে অনেকদিন ধরেই বঞ্চিত হয়ে আসছেন। দীর্ঘ ৪ বছর কঠিন পাঠ্যক্রম, ল্যাব, থিসিস ও প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে পাস করা বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীরা চাকরির বাজারে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি চাকরির দশম গ্রেডে একচেটিয়া শতভাগ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ এবং নবম গ্রেডে পদোন্নতিতে ৩৩.৩ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা আছে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য। অধিকন্তু নবম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা ৫০ শতাংশ করার অন্যায্য দাবিও জানাচ্ছিলো তারা।
এসময় প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন এর যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল আহমাদ ইকবাল বলেন, যেই কোটার জন্য আমাদের গত জুলাইয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে, সেই কোটার জন্য এক বছর পর আবার সেই আন্দোলনেই নামতে হচ্ছে। ডিপ্লোমারা ১০ম গ্রেড সরাসরি নিজেদের করে নিয়েছে, এখন ৯ম গ্রেডে ৩৩% কোটার নামে অনেক জায়গায় ১০০% প্রমোশন নিয়ে নিচ্ছে। এভাবে কোটার মাধ্যমে কেউ বিশেষ সুবিধা পেতে পারে না।
এই আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক শাকিবুল হক লিপু বলেন, ডিপ্লোমাদের বিএসসি সার্টিফিকেট নেই। এভাবে, প্রকৌশলী না হয়েও তারা প্রকৌশলীদের জন্য বরাদ্দকৃত চাকরির পোস্ট সমূহ নিয়ে নিচ্ছে। চার বছর কস্ট করে, পরিশ্রম করে বিএসসি অর্জন করতে হয়। এরপর এমন বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না। এভাবে চলতে পারে না। আমরা তাই আমাদের নিজেদের দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছি।
বিক্ষোভকারী চুয়েট শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন বলেন, সমাবাহু ত্রিভূজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় শিখে এসে ডিপ্লোমারা প্রকৌশলের জন্য বরাদ্দকৃত পদ নিচ্ছে। এদিকে চার বছরে কঠিন কঠিন কোর্স শেষ করে আমরা চাকরিই পাচ্ছি না। আমাদেরকে আবেদন করা থেকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে সমমর্যাদার পদ বাগিয়ে নিচ্ছে। স্বাধীন বাংলায় এমন বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মোহাব্বত বলেন, পেশিশক্তি ও লবিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ পদোন্নতি পাচ্ছে ডিপ্লোমারা। নিয়ম ভেঙে পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। চরম মাত্রার অনিয়ম চলছে। এগুলোর প্রমাণও রয়েছে। এরকম করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এমনটা হতে পারে না। সরকারের উচিত দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া। বৈষম্য দূর করা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ হচ্ছে। সবাই প্রকৌশলীই এই দাবির পক্ষে সোচ্চার।