চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ

চুয়েটনিউজ২৪ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির বিরদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৯ টা থেকে চুয়েটের প্রশাসনিক ভবন-১ এর সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ইতোপূর্বে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগের নাম পূর্বের ন্যায় পুনঃসংস্কার করে পুর ও পানিসম্পদ কৌশল করার এবং পুর ও পানিসম্পদ কৌশল হিসাবে ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডিগ্রী প্রদান করার এক দফা দাবি জানান। এই প্রস্তাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করে পূরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন।

পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও একই মূলধারার দুটি বিভাগ এবং একই ধরনের ডিগ্রি থাকা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তারা জানান, তারা  পানিসম্পদের কোর্স বাদেই পুরকৌশলের কোর্স অধ্যয়ন করেন মোট ১০০.৫ ক্রেডিট। অপরদিকে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই বিষগুলোতে পুরকৌশলের মাত্র ৫১ ক্রেডিট কোর্স অধ্যয়ন করেন যার ফলে সাদৃশ্যপূর্ণ পাঠ্যক্রম পড়ার জন্য সমমানের বা সমধারার ডিগ্রির দাবি করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা এও বলেন, চাকুরিক্ষেত্রে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে বৈষম্যের কথা দাবি করেন তা সঠিক নয়।

পুরকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী  মো: মাশহুদুল ইসলাম আলভি চুয়েটনিউজ২৪ কে বলেন, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকারের নাম করে মনগড়া ভুল তথ্য উপস্থাপন করছেন। তারা এসব অজুহাত দেখিয়ে তাদের পূর্বের নামে ফিরে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি এই বিভাগটা খোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে পানি কৌশলে পারদর্শী করা, পুরকৌশলী তৈরি করা নয়।  তাদের চাকরি ও অবকাঠামগত সমস্যা সমাধান কখনো নামের সাথে ‘পুর’ শব্দটি যোগ করার মাধ্যমে আসতে পারেনা। পাশাপাশি তারা চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা বললেও অনুসন্ধান করে দেখা যায় প্রতিবছর শতাধিক পদে তাদের জন্য চাকরির সার্কুলার দেয়া হয়। আমরা চাই তাদের সমস্যাগুলোর যৌক্তিক সমাধান হোক নামের সাথে, বা ডিগ্রির সাথে ‘পুর’ শব্দ যোগ করার মাধ্যমে নয়। 

পুরকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম জানান, পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। এক বিভাগে পড়ে অন্য বিভাগের সমমান বা একই ধরণের সার্টিফিকেট চাওয়া কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। আমরা সিভিলের স্টুডেন্টরা আমাদের সাথে এ অন্যায় ও বৈষম্য কোনভাবেই মেনে নিবো না। বরং তাদের আশা রাখবো তারা এসব অযৌক্তিক দাবির পিছনে না ছুটে ক্লাসে ফিরে যাক এবং তাদের নিজেদের উন্নয়ন কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করুক।

পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হীরা দত্ত বলেন, “আমরা আন্দোলনের শুরু থেকেই আমাদের দাবি সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য উপাত্তের বিশ্লেষণ প্রশাসন ও প্রশাসনের গঠিত নিরপেক্ষ কমিটিকে জমা দিয়ে এসেছি। এছাড়াও স্বচ্ছতার জন্য সকল বিশ্লেষণ সবার সামনে উন্মুক্ত করেছি। আজকে পুর কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাদের বিপক্ষে আন্দোলন করেছে, তারা কিছু যুক্তি পেশ করেছে। তবে তাদের যুক্তিতে বেশকিছু ভুল তথ্য ছিল, যা আমাদের পক্ষ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে খোলাসা করা হবে।নিরপেক্ষ কমিটি প্রায় ৪ মাস ধরে যাচাই বাছাই করে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এবং এ দাবি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত তারা গ্রহণ করেছেন। অথচ এর পরেও, পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাউন্সিলের আগের দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করে যেসকল পোস্ট দিয়েছে, তা দুঃখজনক। এ সংশ্লিষ্ট সকল প্রমাণ কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আশা করছি, নিরপেক্ষ কমিটির সিদ্ধান্তকে সকল পক্ষ সম্মান জানিয়ে আমাদের বিভাগের প্রতি হয়ে আসা বৈষম্যের প্রতিকারে সহায়তা করবে।”

পুরকৌশল ও পরিবেশ প্রকৌশল-এর ডীন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক চুয়েটনিউজ২৪ কে বলেন, ” উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমরা মিটিং করেছি। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। পরবর্তীতে মিটিং করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *