ফাহিম রেজা :
সাদা-কালো ৬৪টি ঘরে জমে উঠেছিল নিঃশব্দ এক যুদ্ধ। সেখানে না ছিল তরবারির ঝনঝনানি, না ছিল গুলির শব্দ। ছিল কেবল ভাবনার গভীরতা, ধৈর্যের পরীক্ষা আর কৌশলের সূক্ষ্ম প্রয়োগ। প্রতিটি চাল যেন শত্রু পক্ষকে কোণঠাসা করার নিখুঁত কৌশল, আর প্রতিটি পদক্ষেপই রাজ্য দখলের পথে এক দৃঢ় অগ্রগতি।
১৬ই মে, শুক্রবার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কেন্দ্রীয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো “১ম চুয়েট ইন্টারন্যাশনাল র্যাপিড রেটিং ওপেন চেস টুর্নামেন্ট ২০২৫”। আয়োজক ছিল চুয়েট চেস ক্লাব, এবং এই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত ১৪০ জনেরও বেশি দাবাড়ু।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আবদুল মতিন ভূইয়া এবং ফিদে জোন ৩.২-এর সভাপতি সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম। সকাল ৯ টায় উদ্বোধনের পরই শুরু হয় দাবার রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা ছিল ৯ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত।
আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন (FIDE) অনুমোদিত এই টুর্নামেন্ট পরিচালনা করেন অভিজ্ঞ ফিদে আরবিটারগণ। প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় সুইস লিগ পদ্ধতিতে, যেখানে ছিল মোট ৮টি রাউন্ড এবং প্রতিটি খেলায় সময় নির্ধারণ ছিল ১০ মিনিট + ৫ সেকেন্ড ইনক্রিমেন্ট।
সারাদিনের এই মানসিক যুদ্ধ শেষে সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয় বিজয়ীদের নাম। চ্যাম্পিয়ন হন সুব্রত বিশ্বাস এবং রানার্সআপ মো. শওকত বিন উসমান শাউন। সেরা দশে স্থান করে নেন চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীও। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। সর্বমোট প্রায় ৩৫ হাজার টাকা সমমূল্যের পুরস্কার বিতরণ করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ছাত্র তাইসির আল আদিব বলেন, “খেলার পরিবেশ ছিল দারুণ, একসাথে সবাই মিলে খেলতে পারা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা আমাদের দাবার প্রতি আরও আগ্রহী করেছে।”
একজন অভিভাবক বলেন, “আমি সন্তানের সঙ্গে এসেছিলাম, চুয়েট চেস ক্লাবের আয়োজন প্রশংসনীয়। শুরুতে সুন্দরভাবে ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে, শৃঙ্খলা ছিল চোখে পড়ার মতো। রিভিউ বোর্ড ছিল যা খুব কার্যকর, এমনকি বাচ্চাদের জন্য চকলেটের ব্যবস্থাও ছিল। আমি চট্টগ্রাম চেস একাডেমির ভূমিকারও প্রশংসা করি।”
আয়োজক চুয়েট চেস ক্লাবের সভাপতি আলিফ হোসেন বলেন, “চুয়েটে এমন একটি বড় পরিসরের দাবা প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। এটি শুধু চুয়েট নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবা চর্চায় উৎসাহ জোগাবে।”
দাবা কেবল একটি খেলা নয়—এটি এক ধরণের মানসিক ব্যায়াম। খেলোয়াড়দের মনোযোগ, ধৈর্য ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়াতে এর তুলনা নেই। প্রতিটি চাল মানে নিজের ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে বুদ্ধির লড়াই। এক ভুল চালে ভেঙে পড়তে পারে গড়া কৌশল, আর একটি নিখুঁত পদক্ষেপই হয়ে উঠতে পারে বিজয়ের চূড়ান্ত সোপান। আয়োজকেরা বিশ্বাস করেন—এই তরুণরাই একদিন বিশ্বমঞ্চে দেশের পতাকা তুলে ধরবে, গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে উজ্জ্বল করবে বাংলাদেশের নাম।