আসহাব লাবিব ও ফাইয়াজ মুহাম্মদ কৌশিকঃ
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রকৌশল উপাদান হলো কনক্রিট। আর এই সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদন্ড উন্নয়নকারী সংগঠন আমেরিকান কনক্রিট ইন্সটিটিউট (এসিআই)। প্রতিবছর এই সংগঠনটি থেকে স্নাতক পর্যায়ে বিশ্বব্যাপী সেরা গবেষণা বাছাইপূর্বক অনুষ্ঠিত হয় “আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ সেশন।”
প্রতিবারের মতো এবছরও “এসিআই ভার্চুয়াল আন্ডার গ্রাজুয়েট রিসার্চ সেশন” অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৬ আগস্ট। উক্ত সেশনে উপস্থাপনের জন্যে বিশ্বব্যাপী মোট আটটি গবেষণা বাছাই করা হয়েছে। বাছাইকৃত এ আট গবেষণার মধ্যে ৩ টি গবেষণাই নির্বাচিত হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে।
বিজয়ী তিন গবেষণার গবেষকরা হলেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আসিবুল ইসলাম পিয়াস, আবু জাফর গিফারী সাগর, শাফায়েত রহমান, মোঃ তাহাজুল ইসলাম পিয়াস। কনক্রিট নিয়ে তাদের করা যুগোপযোগী গবেষণা জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বসেরা আটের কাতারে।
চুয়েটের বিদায়ী বর্ষের দুই শিক্ষার্থী আসিবুল ইসলাম পিয়াস ও আবু জাফর গিফারী সাগর। যৌথভাবে গবেষণা করেছেন কংক্রিটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘খোয়া’ নিয়ে। এ বিষয়ে আসিবুল ইসলাম পিয়াস বলেন, কংক্রিটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খোয়া আসে ইট কিংবা পাথর থেকে। বর্তমান বিশ্বে এ দুটি উপাদানেরই ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে সংকট দেখা দিতে পারে। সেজন্য, কিভাবে এটিকে পুনঃব্যবহার করা যায় এবং মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় সেটিই ছিল আমাদের গবেষণার মূল বিষয়। আবু জাফর গিফারী সাগর বলেন, আমরা বছরের পর বছর কংক্রিট ব্যবহার করায় একসময় এটি তার কার্যক্ষমতা হারায়। তখন এই অব্যবহৃত কংক্রিট থেকে কিভাবে পুনরায় খোয়াকে আলাদা করে ব্যবহার করা যায় সেটির লক্ষ্যেই ছিল আমাদের গবেষনা। এসিআইয়ের সেরা আট এ জায়গা করে নিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
ধানের তুষকে প্রক্রিয়াজাত করে সিমেন্টে ব্যবহার করা নিয়ে গবেষণা করেছেন মোঃ তাহাজুল ইসলাম পিয়াস। তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করে জানান,
এসিআই এর ভার্চুয়াল আন্ডারগ্র্যাড সেশনের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত। এই অর্জন আমাকে আরও গভীরভাবে গবেষণা করতে এবং নতুন উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই গবেষণা করতে গিয়ে আমি যে পরিশ্রম করেছি, তার স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই সম্মানের। আমি কৃতজ্ঞ আমার পরামর্শক ড. জি. এম. সাদিকুল ইসলাম স্যারের প্রতি, যার সাহায্য এবং দিকনির্দেশনা ছাড়া এই অর্জন সম্ভব হতো না। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিও এ ব্যাপারে কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে, স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং এর জন্য কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী শাফায়েত রহমান। এক্ষেত্রে তিনি করেছেন নানাবিধ সেন্সরের ব্যবহার। যাতে অনুমান করা যায় কখন একটি অবকাঠামোর ক্ষয় শুরু হবে। এর মাধ্যমে একটি অবকাঠামোকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা সম্ভব। সেরা আটে স্থান পাওয়ায় তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন,
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা অনেক বড় অর্জন। আমি আমাদের স্যারদের এবং আমার শুভাকাঙ্খীদের ধন্যবাদ দিতে চাই। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে চুয়েটকে আরও এগিয়ে নিবে।
উল্লেখ্য, বিজয়ী তিন গবেষণার দুইটিতেই পরামর্শক হিসেবে ছিলেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার, চুয়েটের বিভাগীয় উপদেষ্টা ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম। তিনি এ ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন,
আমাদের শিক্ষার্থীরা আগেও এসিআইয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী বিজয়ী হয়েছে। করোনা চলাকালীন সময় অনলাইনে প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছে। ঠিক একই ভাবে এবার আয়োজিত আন্ডারগ্রাজুয়েট ভার্চুয়াল রিসার্চ সেশনে আটটির মধ্যে আমাদের তিনটি গবেষণাই বিজয়ী হয়েছে। এটি আমাদের জন্যে অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের বিষয়। আমরা আশাকরি আগামীতেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যের ধারা অব্যহত থাকবে।
উল্লেখ্য, এই সাফল্যের পিছনে এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার চুয়েট সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিজয়ীরা। তাদের গবেষণার অনুপ্রেরণা ও তার যথার্থ ব্যবহার শেখাতে এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তারা।