আকিফা মঞ্জুর:
কালের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবার ২৩ তম বর্ষে পদার্পণ করল, প্রকৌশল শিক্ষায় দেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট )। প্রকৌশল শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে ১৯৬৮ সাল হতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে স্বায়ত্তশাসিত বিআইটিতে রূপান্তরিত করা হলেও তৈরি হয় নানা ধরণের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ।পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয় এবং বিআইটি (চট্টগ্রাম) দেশের দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১লা সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে।
আজ ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সকাল ১০.৪০ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর ভূমি মন্ত্রণালয় এর মাননীয় সিনিয়র সচিব জনাব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এর পরপরই ২৩তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে এক আনন্দ র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে রঙ-বেরঙের প্ল্যাকার্ড ও ফ্যাস্টুন সহকারে চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীগণ অংশগ্রহণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম সংলগ্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের স্মারক হিসেবে বৃক্ষরোপণ করা হয়। চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১২৬জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৩ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়। এরপর শিক্ষক বনাম ছাত্র ও কর্মকর্তা বনাম কর্মচারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
বেলা ১১.০০ টায় চুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো: জিয়াউদ্দীন, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসেন, পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. এ.এইচ. রাশেদুল হোসেন, মেকানিক্যাল এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী আফজালুর রহমান, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান, চুয়েট এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী খান আতাউর রহমান সান্টু, চুয়েট এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম খান ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা প্রশাসক জনাব সাইফুল ইসলাম।
চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জি. এম. সাদিকুল ইসলাম, কর্মকর্তা সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ ইকরাম, কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ চক্রর্বত্তী এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ছাত্র আসহাব লাবিব ও ইইই বিভাগের ২০ ব্যাচের ছাত্রী উম্মে মাবরুরা উমামা।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন চুয়েটের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র প্রকৌশলী এ টি এম তানভীর-উল-হাসান তমাল এবং অনলাইনে সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন চুয়েটিয়ানস ইন অস্ট্রেলিয়া এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. জিএম শফিউল্লাহ। এতে সঞ্চালনা করেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার, ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান চৌধুরী, ইটিই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব প্রিয়ন্তি পাল টুম্পা ও ইইই বিভাগের প্রভাষক জনাব আজমল আহমেদ।
গেস্টস অব অনার এর বক্তব্যে চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া বলেন, বর্তমানে চুয়েট খুব দ্রুত আধুনিকায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের অনেক বাধা রয়েছে কিন্তু এরপরেও আমরা চুয়েটে আধুনিক গবেষণাগার নির্মান ও ডিজিটাল সেবাকে সমুন্নত করছি যাতে স্মার্ট ক্যাম্পাস গঠনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে চুয়েটকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিনির্মান করতে পারি। আমরা এমন এক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে জ্ঞান, উদ্ভাবন এবং মানবিকতা একসূত্রে গাথা থাকবে।
সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন ,”বর্তমানে প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।পরিবেশ চ্যালেঞ্জ, পানির সংকট ইদানিং বড় ধরনের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৌশল বিদ্যা দিয়ে এগুলোর মোকাবেলা করা শিখতে হবে ও শেখাতে হবে।”
গেস্ট অব অনার এর বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিশ্ব আজ অভূতপূর্ব গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের যুগে প্রবেশ করেছি। কিন্তু এসব প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তব প্রয়োগ এখনো পর্যাপ্ত নয়। সময় এসেছে এসব দক্ষতা দ্রুত আয়ত্ত করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের। নইলে প্রযুক্তির দৌড়ে আমরা পিছিয়ে পড়ব।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়েটের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) জনাব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। পরে কোরাআন তিলাওয়াত করেন চুয়েট এর স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হামিদ উল্লাহ।