মো.গোলাম রব্বানীঃ
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(চুয়েট) বাস চালকের সাথে ঔদ্ধত্যপূরণ আচরণ ও শারীরিক হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাত ৯ ঘটিকায় চট্টগ্রাম শহর থেকে চুয়েটের উদ্দেশ্য ছেড়ে সাঙ্গু বাস নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন পৌছালে এমন ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসের হেলপার সূত্রে জানা যায়, সাঙ্গু বাসটি ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় পৌঁছালে বাসের ভেতর থেকে কয়েকজন ছাত্র বাস থামানোর জন্য সংকেত দেন। চলন্ত অবস্থায় গাড়ি না থামিয়ে রাস্তার পাশে নিতে একটু দেরি হওয়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে বাস চালকের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এসময় চালকের সাথে অশোভন আচরণ ও ধাক্কাধাক্কি করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে অপমানিত হয়ে বাস চালক গাড়ি থেকে নেমে চলে যান
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা জানা বাস থামানো নিয়ে এসব অভিযোগ আরো পুরনো। শিক্ষার্থীদের একটি দল প্রতিনিয়ত রাস্তার যেখানে যেখানে গাড়ি থামানোর জন্য জোর করে।একারণে প্রতিদিন সকল গাড়ির তুলনায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর সাঙ্গু বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছায়।
এই বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে, ঘটনার দিনের বাস চালক জাহিদুল ইসলাম জানান, “সেদিন প্রথম তারা জিইসি মোড়ে ৬-৭ মিনিট বাস দাঁড় করায়। আমি তাদের কথা নীরবে মেনে নেই। এরপর ষোলশহর এলাকায় গাড়ি পৌছালে তারা আবার গাড়ি থামাতে বলে।
রাস্তার মাঝামাঝি থাকায় আমার থামাতে একটু দেরী হয়।এতেই শিবাজি, সৌমিক, রাসেল, আসিফ সহ আরো দশ পনেরজন মারমুখী হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে।এসময় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক ভাবে হেনস্থা করে।” প্রসংগত শিবাজি,সৌমিক, আসিফ এবং রাসেল প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
তাদের নিয়মে চালাতে হবে বাস:
চালক সূত্রে জানা যায়, হেনস্থার পরে তিনি যখন নেমে যেয়ে প্রশাসন কে বিষয়টি অবহিত করছিলেন, তখন তারা দাম্ভিকতার সাথে জানায় প্রশাসনের কারো সামর্থ্য নাই বিচার করার। বরং তাদের মর্জি মতোই বাস চালাতে হবে। ঘটনার বর্ণনা করে চালক বলেন, তারা আমাকে মারমুখী হয়ে বলে, চুয়েটে তোদের কোন বাপ আছে যে আমাদের বিচার করবে? তুই সাঙ্গু বাস আর চালাবি না, সাঙ্গু বাস চালানোর নিয়ম তোর জানা নেই।
বাসেই চলছে নিয়মিত মাদক সেবন:
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই শহরের ষোলশহর স্থান থেকে কিছু শিক্ষার্থী মাদক কিনে বাসের মধ্যেই সেবন করে।ঘটনার দিন ও বাসে মাদক সেবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর পর বাসটি পরিদর্শন করেন ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় বাসের শেষের সীট থেকে মাদক গ্রহণের আলামত উদ্ধার করেন তিনি।তবে কে বা কারা এই মাদক গ্রহণে জড়িত ছিল তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেন নি। তবে বাসের স্টাফ সূত্রে জানা যায় যে গ্রুপটি হেনস্তায় জড়িত ছিলো তারাই নিয়মিত বাসে মাদক সেবন করেন

এদিকে অভিযুক্ত তিনজনই বিষয়টিকে অস্বীকার করে। সৌমিক বলেন, আমি বাসের সামনের সিটে ছিলাম,এসবে আমি ছিলাম না। নগরীর ষোলশহর নয় বহদ্দারহাট থেকে বাসে উঠেছি বলে দাবি করেছে আসিফ এবং রাসেল কুয়াইশ থেকে বাসে উঠেছে বলে জানায়।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন,আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমরা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনবো।
এদিকে সম্প্রতি চুয়েটের সাঙ্গু বাসে সীট দখল করা নিয়ে দলগত আধিপত্যের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কতিপয় শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষমতা বুঝানোর জন্য দলগতভাবে বাসগুলোর সিট দখল করে। চুয়েটের ছাত্ররাজনীতিতে এখন দুই গ্রুপ বিরাজ করছে। সূত্র জানায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাসিরউদ্দিনের অনুসারীরা এবং অপর পক্ষে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হয়ে দুই ভাগে রাজনীতি করছে ছাত্রনেতারা। নিজেদের প্রাধান্য বুঝাতে একটি দল তিস্তা ও সাঙ্গু বাসকে আর অন্যরা সুরমা বাসকে নিজেদের বলে দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছে। এমনকি করোনা মহামারী কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর সাঙ্গু বাসটির পিছনে একটি গ্রুপ তাদের নিজেদের দলের নাম লিখে আধিপত্যের জানান দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন করে রং দিয়ে লেখাটি মুছে দেয়।