চুয়েটে প্রথম বারের মতো “জাতীয় গবেষণা মেলা” সম্পন্ন

চুয়েটনিউজ২৪ ডেস্কঃ

“স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জ্ঞান অন্বেষণ” স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)  অনুষ্ঠিত হলো “গবেষণা মেলা-২০২৩”।  চুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আজ সোমবার এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন , “মেলার যে ধারণা, তার সঙ্গে মানুষ অন্যভাবে পরিচিত। কিন্তু গবেষণা নিয়ে মেলা, এটা একটা নতুন ধারণা। গবেষণা মেলায় নতুন-নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও জনসম্মুখে সেই জ্ঞানের বিতরণ দুটো কাজই একসাথে হয়ে থাকে। গবেষণার মাধ্যমে সমাজে একটা রূপান্তর ঘটে। আজকের এই গবেষণার মেলার মাধ্যমে সেই বিদ্যার আরো সম্প্রসারণ হবে বলে আমি আশাবাদী।বর্তমান বাস্তবতায় প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। তাছাড়া বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ের প্রধান প্যারামিটার হচ্ছে গবেষণা ও উদ্ভাবন। এখন ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশানের যুগ। একইসাথে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাজে লাগিয়ে তাদের কল্যাণেই কাজ করা।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়েটের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল, যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিসার্র্চ ফেয়ার-২০২৩ এর আহ্বায়ক এবং গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিসার্র্চ ফেয়ার-২০২৩ এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ ও সিএসই বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া বিনতে হাই। মেলায় দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা, প্রফেশনাল ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসে। যেখানে চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত মোট ১৩১টি গবেষণা প্রবন্ধ (৯৪টি পোস্টার ও ৩৭টি প্রজেক্ট) দুইভাগে বিভক্ত হয়ে উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “চুয়েটের ভৌগলিক অবস্থান মফস্বলে হলেও ছাত্র-শিক্ষকদের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিউএস র‌্যাংকিংয়ে সেটার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবন, দেশে-বিদেশে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনে সর্বদাই সচেষ্ট। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা সংস্কৃতি তৈরির লক্ষ্যে ‘বেস্ট রিসার্চ পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘স্টুডেন্ট রিসার্চ ফান্ড’ চালু করেছি। এবার গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার প্রয়াস হিসেবে প্রথমবারের মত গবেষণা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি এখন থেকে এই মেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হবে।”

এর আগে সোমবার সকাল ১০:১৫ ঘটিকায় চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে আনন্দ র‌্যালির মাধ্যমে গবেষণার মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে বেলা ১২:০০ ঘটিকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই-এর তত্ত্বাবধানে “স্মার্ট এমপ্লয়মেন্ট” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। পরে গবেষণা মেলায় উপস্থাপিত প্রবন্ধের সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপর বেলা ১২:১০ ঘটিকা থেকে প্রজেক্ট শো-কেস এবং পোস্টার প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়। উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে বেলা ২:৩০ ঘটিকায় শুরু হয় “ইন্ডাস্ট্রিয়াল টক” এবং বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিখ্যাত মেটাল উৎপানকারী প্রতিষ্ঠান ইতালির ডেনিয়েলি গ্রুপের “কর্মসংস্থান” বিষয়ক প্রেজেন্টেশন। পরবর্তীতে বিকাল ৩:৩০ ঘটিকা থেকে চুয়েট শিক্ষকদের মাঝে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের “DRE Research Project Award” এবং ২০২২ সালের “Best Research Publication Award” প্রদান করা হয়। সবশেষে বিকাল ৪:৩০ ঘটিকায় প্রথম জাতীয় গবেষণা মেলার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। উক্ত সমাপনী অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক।

চুয়েটে এ ধরণের ব্যাতিক্রমধর্মী আয়োজনের জন্যে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *