চাকরিতে বৈষম্য নিরসনে ৩ দফা দাবিতে চুয়েটে বিক্ষোভ

ফাহিম রেজা :

বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসন ও তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আজ ২২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা চত্বরে এই  বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবি তিনটি হলো-
প্রকৌশল নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী হওয়া, কারিগরি দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করা এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কেউ ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেনা মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করা। এই তিন দফা দাবি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান শিক্ষাথীরা।

বর্তমানে কারিগরি পদে (১০ম গ্রেড) শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরাই আবেদন করতে পারেন এবং পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তারা সরাসরি ৯ম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী পদে প্রবেশ করতে পারেন। তবে একজন বিএসসি ডিগ্রিধারীকে এই ৯ম গ্রেডে প্রবেশ করতে প্রচুর প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একারণেই এই আন্দোলনে আসতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

“প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন”-শীর্ষক ব্যানারে আজ সারাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা একযোগে এই বিক্ষোভ মিছিল পালন করে। শিক্ষার্থীদের মতে, প্রকৌশল চাকরিতে প্রবেশের বর্তমানে চলমান নিয়ম অনুসারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। এতে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের বেশি সুযোগ দেওয়া আছে। যার ফলে প্রকৌশল শিক্ষার মানকে ছোট করা হচ্ছে, মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। 

তাদের মতে, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারীরা পদোন্নতি ও নিয়োগে ন্যায্যতা থেকে অনেকদিন ধরেই বঞ্চিত হয়ে আসছেন। দীর্ঘ ৪ বছর কঠিন পাঠ্যক্রম, ল্যাব, থিসিস ও প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে পাস করা বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীরা চাকরির বাজারে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি চাকরির দশম গ্রেডে একচেটিয়া শতভাগ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ এবং নবম গ্রেডে পদোন্নতিতে ৩৩.৩ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা আছে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য। অধিকন্তু নবম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা ৫০ শতাংশ করার অন্যায্য দাবিও জানিয়ে আসছিলো তাঁরা।

তাঁরা আরও বলেন, সরকারি নিয়োগে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রাধান্য ও বিএসসি ডিগ্রীধারী প্রকৌশলীদের উচ্চতর পদে প্রবেশে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা পেশাগত মর্যাদা ও ন্যায্যতা লঙ্ঘন করে। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। অভ্যুত্থানের পরেও চাকরিক্ষেত্রে এরকম অন্যায্য কোটা থাকা জুলাই শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি। তাই অনতিবিলম্বে এ কোটা প্রথা বাতিল চান তাঁরা।

 এই বিষয়ে পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইালাম মিরাজ চুয়েটনিউজকে জানান, দশম গ্রেডের পদটি উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের। কিন্তু যারা আসলেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, তাঁরাই আবেদন করতে পারে না। আবার অনেকে দশম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে নবম গ্রেডে যাচ্ছে, তাঁদের সেটার যোগ্যতাটাও নেই। কারণ এর জন্য বিএসসি সার্টিফিকেটটা প্রয়োজন, তাঁদের সেটা নাই। তাঁদেরকে একসময় দশম গ্রেডে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁরা পুরোপুরি এটিকে নিজেদের করে নেন। তাই এবার আমরা নিজেদের অধিকার আদায়ে আমরা তিন দফা দাবি নিয়ে আজ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করছি।

এই বিষয়ে চুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমাদের ৩ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে, এ দেশের মেধাবী সন্তানদের সাথে অন্যায় ও বৈষম্য করা হবে। যদি এই দেশে মেধাবীদের গুরুত্ব দিতে না জানি, তবে মেধাহীন রাষ্ট্র তৈরি হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আসন্ন হাহাকার থেকে দেশকে বাঁচাতে এখনই প্রকৌশলীদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *