স্বপ্ন ছড়াল ক্যারিয়ার আড্ডা

2

ইনজামাম উল হক:

যেই ছেলেটিকে নিয়ে কেউ কখনো স্বপ্ন দেখেনি, যার চুয়েটের প্রকৌশল শিক্ষা আদৌ শেষ হবে কিনা সেটা নিয়েই ছিল সংশয়, সেই ছেলেটিই ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় হয়েছিলেন প্রথম স্থান অধিকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনিস্টিটিউটের (আইবিএ) স্নাতকোত্তর ভর্তি পরীক্ষায়ও হয়েছিলেন প্রথম। ছেলেটার নাম সুশান্ত পাল, বর্তমানে যিনি বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমসের সহকারী কমিশনার। সঠিক সময়ে সঠিক কিছু সিদ্ধান্তই ঘুরিয়ে দিয়েছিল তার জীবনের মোড়, দুহাত ভরে এনে দিয়েছিল সাফল্য। সাফল্য্যর সেই গল্প শোনাতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব (চুয়েটসিসি) আয়োজিত ‘ক্যারিয়ার আড্ডা’য় প্রধান বক্তা হিসেবে চুয়েটে এসেছিলেন সুশান্ত পাল। আড্ডার পুরোটা সময়জোড়ে শিক্ষার্থীদের সামনে তিনি তুলে ধরেছেন সাফল্যের মন্ত্র, দিয়েছেন ক্যারিয়ার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা।

অনুষ্ঠানটির শুরুটা হয় শুক্রবার সকাল ১১টায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে  ‘ক্যারিয়ার ও কর্মসংস্থান’ শিরোনামের সেমিনারটির উদ্বোধন করেন চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের উপদেষ্টা ড. কাজী দেলোয়ার হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সজল চন্দ্র বণিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম, ক্যারিয়ার ক্লাবের চীফ মডারেটর ড. মো. আজাদ হোসেন প্রমুখ। ক্যারিয়ার ক্লাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি দেলোয়ার জাহান সোহাগ এবং সহ-সভাপতি এ এইচ এম সাইফুল্লাহ। পরে বেলা ১২টায়  ক্যারিয়ার উন্নয়ন এবং কারিকুলাম ভিটা (সিভি) তৈরির বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেডের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক অফিসার মোঃ শাহাদত ইসলাম। বক্তব্যে তিনি কর্পোরেট বিশ্বের পেশাদারিত্ব এবং চাকরির সাক্ষাতকারে নিজেকে উপস্থাপন করার কৌশল উপস্থাপন করেন। ক্যারিয়ার ক্লাবের পক্ষ থেকে মো. শাহাদত ইসলাম এবং সুশান্ত পালের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়ার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব ।

বেলা ৩টা থেকে দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ সুশান্ত পালের ক্যারিয়ার আড্ডা। অবশ্য তার আগ থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় চুয়েট কেন্দ্রীয় মিলনায়তন।এই পর্বের শুরুতে উদ্বোধন করা হয় চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের ওয়েবসাইট। প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থীর সামনে সুশান্ত পাল উপস্থাপন করতে শুরু করে তার সাফল্যের গল্প। শুরুতেই তিনি বিভিন্ন চলচিত্রের কিছু অনুপ্রেরণামূলক সংলাপ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীদের সামনে। প্রাথমিক জীবনে নিজেকে একজন ‘নো বডি’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এখানে যারা আছেন, যারা এখনও ক্যারিয়ার  শুরুই করেননি তারা কি সত্যিই পিছিয়ে আছেন? আমি আমার বন্ধুদের চেয়ে অন্তত সাড়ে চার বছর পর চাকরি শুরু করি। যে ছেলেটি একসময় অনার্স শেষ করার আশা ছেড়ে দিয়েছিল, সেই ছেলেটির আজকের অবস্থানে আসার গল্প আমি তুলে ধরছি।

তিনি ক্যারিয়ার সম্পর্কে নিজের দর্শন তুলে ধরে বলেন, ক্যারিয়ার শুরু করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিন কি আপনার ভাল লাগে। সবাই সবকিছু পারে না। এটা মেনে নিন । আপনি কোন কাজটা ভাল পারেন সেটা বের করুন। আপনি যে বিষয়টাতে আগ্রহবোধ করেন না , সেটাতে সময় দেয়া মানে স্রেফ সময় নষ্ট করা।

শিক্ষার্থীদের পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে কৌশলী হবার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, লোকজন যেটা পারে না ,ওরা ধরেই নেয়, আপনিও সেটা পারবেন না। তাই উপদেশ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে বিসিএস প্রিলিমিনারী, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় ভাল করার বিভিন্ন কৌশল উপস্থাপন করেন। এক প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সুশান্ত পালের ৫ ঘন্টাব্যাপী ক্যারিয়ার আড্ডা। আড্ডায় অংশ নেয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় অংশগ্রহণ সনদপত্র। আড্ডার বিরতিতে দেখানো হয় মাদকবিরোধী ভিডিও।

দীর্ঘ এই ক্যারিয়ার আড্ডা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেছেন তাসনিম মুস্তারী এবং প্রিয়ন্তি পাল। তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল (ইটিই) বিভাগের শিক্ষার্থী। ক্যারিয়ার আড্ডা শেষে অনুভূতি জানতে চাইলে তারা বলেন, আজকের প্রোগ্রামটি আমাদের খুবই ভাল লেগেছে। আজ সামনে এগিয়ে যাবার একটি লক্ষ্য খুজে পেলাম। আমরা খুবই অনুপ্রাণিত। চট্টগ্রাম ভেটেনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আড্ডায় অংশ নেন শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ । তিনিও একই কন্ঠে বলেন, আজকের আড্ডায় ক্যারিয়ার সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেলাম। অনেক খারাপ অবস্থানে থেকেও যে জীবনে অনেক বড় কিছু করা সম্ভব, তা আজকে বুঝতে পারলাম। অন্যদিকে অন্যরকম এই আয়োজনের জন্য চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুরকৌশল বিভাগের সাগর সরকার বলেন, পুরো প্রোগ্রামটি ছিল অনেক গোছালো এবং উপভোগ্য। জীবন সম্পর্কে অনেক ধারণায় আজ বদলে গেল।

সফল এই আয়োজনে আয়োজকরাও দারুণ তৃপ্ত । কন্ঠে সেই তৃপ্তি জড়িয়ে চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি দেলোয়ার জাহান সোহাগ বলেন, চুয়েটের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে এই সেমিনারটি আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতে আমাদের এ ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সেমিনারের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল চুয়েট এলামন্যাই এসোসিয়েশন ও ইয়ুথ ক্যার্নিভাল, এবং শিক্ষা সহযোগী হিসেবে ছিল লেন। চুয়েটনিউজ২৪.কম সেমিনারের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে।

তারিখ: ২২.১০.১৬