ভালো নেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চশিক্ষার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ছাত্রসমাজের করণীয় ‍নিয়ে চুয়েট নিউজ২৪ এর মুক্তচিন্তা বিভাগে লিখেছেন চুয়েটের বাংলাদেশ ছাত্রইউনিয়ন কর্মী অটল ভৌমিক

[dropcap]এ[/dropcap]ক অস্থির ঘুণেধরা সময়ে আমাদের দিন কেটে যাচ্ছে। স্বপ্ন আর মুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিলো, আধিপত্যবাদী নৈরাজ্যের মুখে সে স্বপ্ন এখন মলিন। একদিকে আমাদের শিক্ষাখাতে বাড়ছে বৈষম্য অন্যদিকে মুক্তচিন্তার সুষ্ঠু প্রকাশের উপর একের পর এক আরোপ হচ্ছে নানান বিধিনিষেধের বেড়াজাল। এই যখন সার্বিক পরিস্থিতি তখন আমাদের স্পষ্টত উপলব্ধি হয়- এক অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ!

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষার একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে যাতে উচ্চশিক্ষার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করার নীলনকশা করা হয়েছে। ২০০৬সাল থেকে ২০২৬সালের মধ্যে ধাপে ধাপে শিক্ষাব্যয় বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে ক্রমশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ আয় নির্ভর করে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে এই কৌশলপত্রে। আমরা যদি চুয়েটের অবস্থা বিবেচনা করি তবে দেখতে পাই যে এখানে প্রতিটা ব্যাচেই বাড়ছে সেমিস্টার রেজিস্ট্রেশন ফি এবং হল ফি। অতিসম্প্রতি বিভিন্ন হলের ডাইনিং ফি ১২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও HIGHER EDUCATION QUALITY ENHANCEMENT PROJECT (HEQEP) নামে একটি প্রজেক্ট বিভিন্ন বিভাগে চালু আছে যা আসলে বিশ্বব্যাংকের জোর করে গেলানো ক্যাপসুল ছাড়া আর কিছুই নয়। এই প্রজেক্ট একদিকে যেমন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে অন্যদিকে মৌলিক গবেষণায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকারকে সীমিত করে চলেছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে যখন এই হাডুডু খেলা চলছে তখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা পূরণেও প্রশাসন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। চুয়েটের মতো একটি স্বনামধন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ব্যাণ্ডউইডথ এর ওয়াই ফাই এবং ব্রডব্যাণ্ড ইন্টারনেট সংযোগ না থাকাটা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল অবহেলিতদের কাতারেই নিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরেও চুয়েটে নেই মুক্তিযুদ্ধের কোনো ভাস্কর্য,যা প্রজন্মের ইতিহাস অসচেতনতাকেই নির্দেশ করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানান প্রশাসনিক এবং একাডেমিক জটিলতা তো চুয়েটিয়ানদের নিত্যসঙ্গী। এতসব দেখে এতটুকু বলা যায় যে,  ভালো নেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।

যদি বিশ্ববিদ্যালয়ই ভালো না থাকে তবে সমগ্র দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকার কথা নয় বন্ধুগণ। যে দেশের প্রশাসন অমর একুশের বইমেলার ঠিক আগে আগে সমাজপ্রগতির অগ্রগামী সৈনিক লেখকদেরকে জঙ্গিবাদের জুজু দেখিয়ে হুঁশিয়ার করে দেয় সে দেশে একের পর এক লেখক ব্লগার খুন হওয়াটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হয়। সরকারি মদদে বিভিন্নভাবে রুদ্ধ করা হচ্ছে মুক্তচিন্তার প্রকাশকে। কয়েকদিন আগে ৫৭ধারায় আইন প্রণয়ন যার নব সংযোজন। চারপাশ থেকে আমাদেরকে ক্রমশ একটি দিগন্তবিস্তৃত অন্ধকার গ্রাস করে নিচ্ছে। এই অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়, এ থেকে উত্তরনের কি উপায়? কারাই বা পালন করবে এই গুরুদায়িত্ব? ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিজয় সুনিশ্চিত। আর ইতিহাসের বিভিন্ন পালাবদলে এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। সেই বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম,নব্বইয়ের স্বৈরাচার প্রতিরোধ,২০০৭এর আগস্ট ছাত্র আন্দোলন,শাহবাগের গণজাগরণ আর গত বছর বর্ষবরণে নারী নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন সহ প্রতিটি আন্দোলনেই ছাত্র-ছাত্রীদের সংগ্রামী চেতনাই মুক্তির পথ দেখিয়েছে। রক্তে চেতনার অত্যুজ্জ্বল স্ফূরন আর শ্লোগানমুখর ঝাঁঝালো মিছিল নিয়ে সব ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে দুর্বার করে তোলাই নিয়ে আসতে পারে ন্যায়মুক্তির বারতা। 

তারিখ: ১৩.২.’১৬

[divider]

চুয়েটনিউজ২৪ ডট কম এর মুক্তচিন্তা বিভাগের সকল লেখা লেখকের ব্যাক্তিগত মতামত। লেখার ব্যাপারে চুয়েটনিউজ২৪ ডট কম কর্তৃপক্ষের উপর কোনভাবেই দায়িত্ব বর্তায় না।