বিবর্তন নিয়ে এলো বিপ্লব

বিজয়ী দলের পুরস্কার গ্রহণ মুহূর্ত
বিজয়ী দলের পুরস্কার গ্রহণ মুহূর্ত
পুরস্কার হাতে আরএমএ ইভলূশন ১
পুরস্কার হাতে আরএমএ ইভলূশন ১
চিন্তায় ডুবে থাকা কিছু প্রতিযোগী
চিন্তায় ডুবে থাকা কিছু প্রতিযোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘নামটি কিছুতেই মানানসই হচ্ছিলোনা । শেষে নাম দেয়া  হলো রিভোলিউশন যার বাংলা অর্থ বিপ্লব । কিন্তু তখনো বৈপ্লবিক কিছুই করিনি আমরা । এটাও বাদ দিলাম । অবশেষে নাম দিলাম আরএমএ  ইভলূশন ১ যার নাম বিবর্তন’ –

নিজেদের তৈরি রোবটির নাম নির্ধারণের বিড়াম্বনা নিয়ে কথা হচ্ছিলো সম্প্রতি  চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে । কিন্তু এতদিনে আরএমএ  ইভলূশন-১ রোবটি একরকম বিপ্লব ঘটিয়েই ফিরে এসেছে নিজ ঘরে। কারণ তারা জিতে এসেছে  আহ্‌সানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ইঞ্জিনিয়াস ’১৫ প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার  সেরা পুরস্কারটি ।

গত ২৪ জানুয়ারী ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার চারটি বিভাগ ছিলো । হার্ডওয়ার, সফটওয়ার , রোবটিক্স ও লাইন ফলোওয়ার রোবট ( এলএফআর)। সবমিলিয়ে ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৪ টি দল তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নিয়ে অংশ নেয় উক্ত অনুষ্ঠানে। এরমধ্যে  শুধু এলএফআর বিভাগেই অংশ নেয় ৫৩টি দল।সবগুলো দল নিয়ে প্রথমে বাছাই পর্ব এবং পরে দশটি দল নিয়ে চূড়ান্ত  পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আর বাকি ৫২ টি দলকে টপকে বিজয় মুকুটটি ছিনিয়ে এনেছে চুয়েট আরএমএ ইভলূশন-১ দলটি । এলএফআর প্রতিযোগিতাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বিজয়ী দলের সদস্য সারোয়ার হোসেন রাতুল বলেন,‘প্রতিটি রোবটকে সেনসর কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট পথে বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে গনতব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। বাছাই পর্বে ৪টি এবং   চূড়ানত পর্বে রোবট গুলোকে  সাতটি চেক পয়েন্ট  অতিক্রম করতে হয়েছে। ’আর সবগুলো পয়েন্ট দক্ষতার সাথে অতিক্রম করে মোট ৪৮০ নম্বর পেয়ে  সেরা ২০০০০টাকার পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে দলটি।

তাদের তৈরি রোবটির বিশেষদিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসি করা হলে  দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তড়িৎ কৌশল বিভাগের মামুনুর ইসলাম মিঠু বলেন,‘আমাদের রোবটটির প্রায় প্রতিটি অংশই আমরা হাতে তৈরি করেছি । নিজ হাতে ঝালাই করেছে । খুব সিম্পলি কাজ করার চেষ্টা করছি । এটাই আমাদের রোবটটির বিশেষত্ব। ’ মিঠুর সাথে দলে আরো ছিলেন তড়িৎকৌশল বিভাগের সৈয়দ রেজাউল হক পিদিম, আসিফুর রহমান , নাজমুল হাসান সানি , তাপস পাল, কৃতি সোহাগ চামকা এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের  সঞ্জয় সাহা ও সোরয়ার হাসান রাতুল । তারা সবাই চুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী । চুয়েটের এই দলটির সাফল্যের রহস্য জানতে চাইলে উত্তরে তারা বলেন আমরা সবাই অনেক আগে থেকেই চুয়েটের ‘রোবো মেকাট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশনের(আরএমএ)’ সাথে যুক্ত । এসম্পর্কে দলের আরেক সদস্য বড়ভাই দের ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় আমরা নিয়মিত রোবটিক্স নিয়ে চর্চা করি । নিজেদের ভিতেরে রোবটিক্স জ্ঞান আদান প্রদান করি । আর এভাবেই সবার  সহযোগিতায় তাদের পরিশ্রম ফলপ্রসূ রূপ নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছকে বাঁধা পড়ার পাশাপাশি ব্যবহারিকভাবে রোবটিক্সের প্রয়োগের লক্ষ্য নিয়েই  আরএমএ এর জন্ম হয় ২০০৮ সালে। স্বল্প পরিসরে শুরু  হওয়া সংগঠনটি সময়ের পরিক্রমায় চুয়েটসহ সারা বাংলাদেশেই তাদের সাফল্যের চিহ্ন আঁকতে সক্ষম হয়েছে। কারণ এরই মাঝে আরএমএ ও  চুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগ যৌথভাবে  আয়োজন করেছে  দুইটি আর্ন্তজাতিক সেমিনার যা আইসিএমইআরই নামেই বহুল পরিচিত। শুধু তাই নয় দেশের সর্বপ্রথম রোবটদৌড় প্রতিযোগিতা ‘রোবোরেস’ আয়োজনের কৃতিত্বও তাদের ।

সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ  বলেন,‘বর্তমানে কিছু প্রকল্প,গবষণামূলক কাজের পাশাপাশি আমরা নিজেদেরকে আসন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করছি।’
তিনি আরো বলেন, এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে সবার মাঝে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসটি আরো তীব্র হবে বলেই সবাই বিশ্বাস করেন।
উল্লেখ্য ইতিমধ্যে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর তৃতীয় আইসিএমইআরই হবে বলে এর ঘোষণা দেয়া হয়েছে ।

03/2/2015