বাবা আমার জন্য তোমার চার বছরের অর্জিত সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছ?- আহত শাওনকে তার বাবা

news

 

 

চুয়েটনিউজ২৪ডেস্ক:

আর তিন চার মাস পরেই যেই ছেলে গর্ব করে আমাকে এসে বলবে, “এই নাও বাবা তোমার জন্য আমি চার বছর কষ্ট করে উপহার হিসেবে এই সার্টিফিকেট অর্জন করে নিয়ে এসেছি, সেই ছেলেকে আজকে ঠিক এইভাবে দেখতে হবে, কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি”- কাঁদতে কাঁদতে বললেন শাওনের বাবা।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ফেইসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে প্রতিপক্ষের ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান কৌশল বিভাগের ’১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুক্তাদির শাওনের অবস্থার কোন উন্নতি হয় নি। মস্তিষ্কের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শাওনকে গত বৃহস্পতিবার অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে । কিন্তুু সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মোতাবেক গত কয়েকদিনে তার অবস্থা অপরিবর্তিত ।

হাসপাতালে অবস্থানরত শাওনের পরিবার এবং সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, হামলায় শাওনের মস্তিষ্কের প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । চোয়াল এবং বুকের পাজরের হাড়ও ভেঙে গেছে । তাছাড়া হাতের গোড়ালী এবং পায়ের হাড়ও মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । চোয়ালের হাড় ভেঙ্গে যাওয়াতে শাওনকে নলের সাহায্যে তরল খাদ্য দেওয়া  হচ্ছে । হাসপাতাল থেকে শাওনের এক সহপাঠী চুয়েটনিউজকে বলেন,গত পাঁচদিন আগে শাওন চোখ খুললেও আমাদের চিনতে পারছে না । কোন কথা বলে না,কারো কথায় কোন সাড়াও দিচ্ছে না ,শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পুরোপুরি সেন্স না আসাতে ডাক্তাররাও তার অবস্থা সম্পর্কে  নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না ।

শাওন মুক্তাদিরের পরিবার বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করলেও তাদের পৈতৃক নিবাস চাদপুর জেলায় । তার পিতা কাজী এম এ মোতালেব একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন এবং তার মা পহেলী আক্তার স্কুল শিক্ষিকা । পরিবারের দুই ভাইয়ের মধ্যে শাওন কনিষ্ঠ । তার বড়ভাই হাসান মোহাম্মদ সাঈদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে পড়াশুনা করছেন । শাওনের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি চুয়েটনিউজকে বলেন, “শাওন চোখ খুললেও তার এখনো কোন সেন্স আসে নাই । মাঝেমাঝে হাত-পা সামান্য নড়াচড়া করে । চোয়াল ভেঙে যাওয়াতে তাকে তরল খাবার দেয়া হচ্ছে । তবে সেন্স না আসায় ডাক্তাররা সার্জারী করতে পারছেন না”। তিনি আরও বলেন , “শাওনকে সুস্থ করে তোলাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তবে শাওনকে হত্যার চেষ্টা  করায়, আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টাও ভেবে দেখছি ।

 উল্লেখ্য, ফেসবুক স্ট্যাস্টাসকে কেন্দ্র করে গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তারা শাওনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ইমাম-গাজ্জালী কলেজে নিয়ে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। তবে এই ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে ।

তারিখ- ০৯.১০.২০১৬