প্রকৌশলীদের বিসিএস প্রস্তুতিঃ পর্ব-১

shahjahan vai

বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং মর্যাদাপূর্ণ চাকরী বিসিএস। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রকৌশলীরা কিভাবে নিজেদের প্রস্তুত করবেন সে সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০১০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান। প্রথম পর্বটি আজকে প্রকাশিত হল। বাকী তিন পর্বে প্রকৌশলীরা বিসিএস পরীক্ষার প্রিলি,লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

‘‘Success doesn’t come from what you do occasionally. It comes from what you do consistently.” – Marie Forleo

জীবনের মৌলিক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম জ্ঞান অর্জন ও চর্চা। জ্ঞানকে ধরে রাখতে হলে মনের গহীনে আশার সঞ্চার করার প্রয়াস থাকতে হয়। জীবনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হলো নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠা। আপনি কোথায় ছিলেন, কোথায় আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়;আসল বিষয় হলো আপনি কোথায় পৌঁছাতে চান। জীবনকে অর্থময় করার জন্য একটি উদ্দেশ্যের অনুসন্ধান করতে হয় এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

শিক্ষা জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মজীবনে প্রত্যাশিত ক্যারিয়ার গড়তে সবাই আগ্রহী। উচ্চ শিক্ষা শেষে ডিগ্রি অনুযায়ী একটি চাকরি পাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা খুবই অস্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। চাকুরীর জন্য শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে পার হতে হয় চাকরি নামের সোনার খাঁচার প্রবেশদ্বার। আর এ তীব্র প্রতিযোগিতায় চাকুরীদাতারা সীমিত সংখ্যক প্রার্থীকে গ্রহণের চেয়ে বহুসংখ্যক প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার বিষয়টিকে বেশি অগ্রাধিকার দেন।

প্রকৌশলীরা কোন দেশের মেধাবী জনগোষ্ঠীর অন্যতম। তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে ও প্রকৌশলীদের একটি বিরাট অংশ দেশের ভিত্তি গঠনে তাদের অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ করার সুযোগ পান। বর্তমানে বিসিএস এ ২৭ টি ক্যাডারে প্রার্থী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকৌশলীরা সাধারণত প্রফেশনাল ক্যাডারে নিয়োগ লাভের জন্য বিসিএস এ অংশগ্রহণ করে। তন্মদ্ধে বিসিএস (গৃহায়ন ও গণপূর্ত), বিসিএস (সড়ক ও জনপথ), বিসিএস (রেলওয়ে), বিসিএস (টেকনিক্যাল এডুকেশন) ক্যাডারে প্রায় প্রতিটি বিসিএস এ নির্দিষ্ট সংখ্যার প্রার্থী নিয়োগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে (সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, গণপূর্ত, তথ্য ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, পানি, জ্বালানি) প্রকৌশলীরা চাকরির সুযোগ পান।

এছাড়াও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, রাজউক, ওয়াসা, ইস্টার্ন রিফাইনারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমি আশা করছি ভবিষ্যতে প্রকৌশলীরাও আইনের ছাত্রদের বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার মতো আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের সুযোগ লাভ করবে।

বিসিএস (ক্যাডার) চাকরি করতে হলে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। তাই প্রার্থীকে একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও প্রযুক্তি, গণিত ও ভাষাগত জ্ঞানের সমৃদ্ধির মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। প্রস্তুতি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে যা পরিকল্পনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত করতে হয়। আর এ প্রতিযোগিতা নামক মহাসমুদ্রে বিজয় নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার ও ধৈর্যের সাথে নিরবচ্ছিন্ন অধ্যয়ন। বিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত কৌশলগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণঃ

• প্রথমেই যে বিষয়টি বা বিষয়গুলো পড়তে হবে সেগুলোর প্রতি আগ্রহ গড়ে তুলুন।
• বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক প্রদত্ত সিলেবাসের বিষয়ভিত্তিক টপিকগুলোর মৌলিক বিষয় জানার চেষ্টা করুন।
• উক্ত সিলেবাসের আলোকে বিষয়গুলোর (সহজবোধ্য ও মনোযোগ আকর্ষণকারী শব্দ ও পয়েন্ট দ্বারা) নোট করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• আয়ত্ত করতে পুনর্বার পড়ুন ।
• পরীক্ষা কেন্দ্রে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন।
• কমপক্ষে একবার হলেও প্রশ্নপত্রটি ভালোভাবে বুঝে পড়ুন।
• সঠিক ভাবে উত্তর করুন।
• সময়ের সদ্ব্যবহার করুন
• নিজের সুবিধা মতো নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• শরীরের প্রতি যত্নবান হোন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না বরং স্বাভাবিক পড়াশুনা ও পরীক্ষার যথাযথ মোকাবেলা করলে আর মনোবল ধরে রাখলে সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছানো যায় নিশ্চিতভাবে। বর্তমানে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাচাই করা হয়। যথাযথ প্রস্তুতি, দিকনির্দেশনা, বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচক্ষণতা থাকলে সফলতা পাওয়া যায়। দিন যতই যাচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণ উত্তরোত্তর পরিবর্তিত হচ্ছে এবং প্রশ্নমালা তৈরির পরিধি ও বাড়ছে। তাই সময়োপযোগী প্রস্তুতি গ্রহণই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

সর্বোপরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে প্রকৌশলীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সম্মুখ অগ্রসর হবে এবং দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। নব নব গবেষণা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষকে পুঁজি করে প্রকৌশলীরা দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করলে দেশ অর্থনৈতিক ভাবে বিশ্বের দুয়ারে মাথা উঁচু করে দাড়াবে।

এই লেখার বক্তব্যগুলো আমার ব্যক্তিগত মতামত। কোন ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে গঠনমূলক সমালোচনা করলে কৃতার্থ হব। লেখাটি শুধুমাত্র বিসিএস আগ্রহী প্রকৌশলীদের জন্য।পরবর্তী লেখায় আপানারা প্রিলির জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকুন। সৃষ্টিকর্তার কাছে সবার উত্তরোত্তর সাফল্য ও দোয়া কামনা করছি।

তারিখঃ ০১/১২/২০১৭ ইং