ঘুরে এলাম নীলগিরির কোল থেকে

  1

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ফর পীস এর উদ্যোগে গত শনিবার জন শিক্ষার্থী ঘুরে এলো নীলগিরি। তাদের এই ভ্রমণ নিয়ে লিখেছেন গ্রীন ফর পীসের সাধারণ সম্পাদক আবুজার লস্কর।

আমাদের ভ্রমণটি শুরু হয় শনিবার সকালে। ভ্রমণে যোগ দিয়েছিলেন ছিলেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বশির জিসান, প্রভাষক মো. সালাউদ্দিন  ও সঞ্জয় দাশ স্যার এবং কম্পিউটারকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামসুল আরেফিন স্যার ও প্রভাষক শায়লা শারমিন ম্যাডাম। আমরা ছিলাম ১১ ব্যাচের রাজু, মৃণাল, মাহফুজ, প্রিন্স, মুকুল, ইব্রাহিম, ১২ ব্যাচের শুভ, ইলিয়াস  ও ’১৩ ব্যাচের কিফায়েতসহ আরো অনেকেই।

ভোর ছয়টায় চুয়েট থেকে আমরা রওনা দিলাম নীলগিরির পথে। পথে মেঘলায় নেমে সেখানের ক্যাবল কার চড়ার সময় সুযোগটা হাতছাড়া করিনি। এতদিন শুধু দেখেছি, আজ চড়ার অভিজ্ঞতা না হলেই নয়। যখন ক্যাবল বেয়ে মাঝপথে চলে এলাম তখন নিচে তাকালেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছিলো। যদিও আমাদের পড়ে যাওয়ার কোন কারণ ছিলনা তবুও অজানা এক ভয়ে বন্ধুরা একে অন্যকে ধরে রাখছিলাম।

তারপর বান্দরবান শহরে এলাম। শহর থেকে ‘চান্দের গাড়ি’ জিপে চড়ে রওনা দিলাম নীলগিরির দিকে। পথে মিষ্টি রোদের সাথে গাড়িতে বাতাস যখন খেলা করে সেটা কম উপভোগ্য নয়। গাড়িতেই হয়ে গেল এক ফটোসেশন।

2

বহুক্ষণ পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি এটা মনে হতেই পথের মধ্যেই খাওয়া দাওয়ার জন্য হুরহুর করে ঢুকে পড়লাম একটা পাহাড়ী দোকানে। আমাদের চেঁচামেচিতে হয়ত দোকানি একটু বিরক্তই হলেন। তবে পরিচয় দেয়ার পর যখন জানতে পারলেন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছি, তখন সাদরেই বরণ করে নিলেন আমাদের। দোকানের ভিতরের সংগ্রহশালায় নিয়ে আমাদের তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য দেখালেন। কুটির শিল্পগুলো পরখ করে দেখলাম, ছবি তুললাম। এরমধ্যেই জিসান স্যারের কল্যাণে সদ্য কেটে আনা পাহাড়ি কলা খেয়ে দেখার সুযোগ পেলাম। দোকানে প্রবেশ করলেই প্রত্যেকের জন্য ভিজিটিং চার্জ পঞ্চাশ টাকা লাগে, তবে এ যাত্রায় আমরা না দিয়েই চলে এলাম।

নীলগিরি এসেই রীতিমত ছবি তোলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। কে কার সাথে ছবি তুলবে, আর আমাদের সবারই প্রিয় শিক্ষকদের সাথের মুহূর্তটি একবারের জন্য হলেও ফ্রেমবন্দি করা চাই। নীলগিরির এদিক সেদিক ঘুরে দেখলাম। উঠে এলাম চূড়ায়। দূর পাহাড়ের বুকে প্রকৃতির সবুজ হাতছানি আঁকা। সবুজ আর নীল যে প্রান্তে মিশে যাচ্ছিল সে প্রান্তটার দিকে দৃষ্টিপাত করলে কেমন যেন ঘোর লাগছিল। এই হয়ত সবকিছু ফেলে সেখানে ছুটে যেতে পারবো ইচ্ছে হলেই। তখনই একটা অবজারভেশন টেলিস্কোপ দেখলাম সেখানে। দূরে মায়ানমার, কক্সবাজারের সৈকত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল তাতে। আমি বিশেষভাবে অপেক্ষা করছিলাম মেঘ ছোঁয়ার অভিজ্ঞতাটার জন্য। কিন্তু আশেপাশে মেঘ দেখতে পাচ্ছিলাম না। স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানালেন, মেঘ ছুঁয়ে দেখতে হলে আসতে হবে শীতের খুব সকালে। শীতকাল তো  আগেই বিদায় বলে চলে গেছে। তাই মেঘগুলো এবারের জন্য অধরাই থেকে গেল।

এরপর ফেরার পালা। নীলগিরি ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা ছিল সত্যিই নতুন। মনটা কেমন যেন ভারী হয়ে এল। ফেরার সময় মনে হচ্ছিল পরেরবার এসে যখন মেঘ স্পর্শ করবো তখন একা আসা না হলেও প্রিয় বন্ধুদের হয়তোবা আর সাথে পাবোনা।