নদীর বুকে প্রকৌশলীদের মিলনমেলা

IMG_20170217_101458
শামসুল আলম সম্রাট :
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ ,এককালে এই নদীগুলোকেই ঘিরে চলতো বেশীর ভাগ উৎসব । বাংলার সেই পুরোনো ঐতিহ্যকে আবার নতুন ভাবে ধারণ করতেই সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালরেয় (চুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এবার তাদের বার্ষিক পূনর্মিলনী উদযাপন করেন দিনব্যাপী নৌবিহারের মাধ্যমে । গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ দেশ-বিদেশে কর্মরত সহস্রাধিক প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে মেঘনা নদীর বুকে আয়োজন করা হয় এই পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানের। কাকডাকা ভোরে ঢাকা সদরঘাটের ভিআইপি কাউন্টার থেকে শুরু হয় নৌযাত্রা। আয়োজকদের নির্দেশনায় একসময় সবাই উঠে পড়ে দেশের সর্ববৃহত লঞ্চ সুন্দরবন ১০এ । এরপর সমসাময়কি অন্য সব নৌযানকে পেছনে ফেলে চাঁদপুর মোহানার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে কৌশলী মানুষে ভরা এই নৌযানটি।
অনুষ্ঠানে সহপাঠি, বন্ধুবান্ধবদের কাছে পেয়ে সবাই খুব উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠে, অনেকে সাথে নিয়ে এসেছিলো তাদের পরিবার পরিজন। সকলের উপস্থিতিতে তিন তলার বৃহৎ লঞ্চটি যেনো রূপ নিয়েছিলো বিশ্ববদিল্যয়ের এক রঙিন আঙ্গিনায়।
মেঘনার থৈ থৈ জল, দুর্বার বেগে ছুটে চলা লঞ্চের হঠাত বেজে উঠা সাইরেন আর অদূরে নদীর পাশ ঘেঁষে থাকা গ্রামগুলোর মনোরম পরিবেশ প্রতিক্ষণে সৃষ্টি করে অন্যরকম আবহ। চুয়েট ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারজানা মুন্নি
বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মায়ের মতো,সেখান থেকে আসা প্রতিটি মানুষের সাথে আমাদের রয়েছে নাড়ির টান ,সে জন্যই প্রাক্তন চুয়েট শিক্ষার্থীদের এই মিলনমেলায় এসেছি ।’
বর্ণাঢ্য এই নৌবিহারের বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, নামাজ বিরতি, মধ্যহ্ন ভোজ, প্রকৌশলী ও তাঁদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন, পূনর্মিলনী, আলোচনাসভা, চিকিৎসা তহবিলের ঘোষনা ও তাৎক্ষনিক সদস্যগ্রহণসহ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পূনর্মিলনী পর্বে অংশ নেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. কবির আহমেদ ভূঁইয়া সহ অনেক দেশ বরেণ্য প্রকৌশলীরা । এসময় প্রকৌশলীরা তাঁদের ছাত্র ও কর্মজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করেন। সাংস্কৃতিক আয়োজন শেষে প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিনের চিকিৎসা তহবিল সংক্রান্ত ঘোষণা সবার নজর কাড়ে। তিনি তহবিলের চেয়ারম্যান হিসেবে সবাইকে নিজ উদ্যোগে সদস্য হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের জন্য- এই শ্লোগান সামনে রেখে ক্ষুদ্র পরিসরে এক বছর আগে চুয়েট পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতায় আর্থিক সাহায্য নিয়ে পাশে দাড়াবার প্রত্যয়ে তহবিলটির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকৌশলীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তহবিলটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যাবে’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
সবশেষে র‌্যফেল ড্র-এর টান টান উত্তেজনার মাধ্যমে পর্দা নামে প্রকৌশলীদের এই মিলন মেলার। বয়সে প্রৌঢ় কিংবা প্রবীণ হলেও সারাদিন সবার মনে ছিলো তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, একদিনের জন্য সবাই হয়েছিলেন নবীন। সবার স্মৃতিজুড়ে ভেসে বেড়ালো ছাত্রজীবনের সোনালি সময়। চুয়েট প্রাক্তন ছাত্রসমিতির কাছে নতুন কোন জায়গায় এমন চাঁদের হাট বসানোর আবদার রেখে প্রকৌশলীরা মিলিয়ে যান ব্যস্ততার শহর ঢাকায়।