প্রকৌশলবিশ্ব২৪ ডেস্ক:
স্থাপনা নির্মাণ করা হয় সাধারণত দুইটি প্রধান উপাদান দিয়ে একটি হচ্ছে ইস্পাত এবং অন্যটি কংক্রিট। ইস্পাত হালকা, শক্তিশালী, ও ভার বহন সক্ষমতাও এর বেশি। আর কংক্রিট ভারী এবং ইস্পাতের মত ততোটা শক্তিশালী না হলেও এর প্রস্তুতিকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম। প্রকৌশলীদের লক্ষ্য থাকে সবচেয়ে কম খরচে সর্বোচ্চ ক্ষমতার। বলাই হয়ে থাকে প্রকৌশল হচ্ছে- Cost Minimized, Performance Optimized. তাই সাধারণভাবে প্রকৌশলীরা প্রায়ই স্থাপনা নির্মাণে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন কংক্রিটকে । তবে কংক্রিট মানে যে সেখানে শুধু কংক্রিট থাকে তা নয়। কংক্রিটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা টানশক্তি বহন করার ক্ষমতার ঘাটতি। যা এর চাপশক্তি নেয়ার ক্ষমতার তুলনায় প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ। সেজন্য কংক্রিটকে শক্তিশালী ও ব্যবহারোপযোগী করে তোলার জন্য এর মধ্যে বিশেষ জ্যামিতিক গণণা করে বসানো হয় পরিমিত পরিমাণ ইস্পাত যাকে আমরা সচরাচর রড হিসেবে চিনি। আর এই দুইয়ে মিলেই তৈরি হয় রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট বা সংক্ষেপে আরসিসি।
স্থাপনায় বহুদিন ধরেই রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার হয়ে আসছে সফলভাবেই। তবে একটি সমস্যা যা অনেকদিন ধরেই গবেষক ও প্রকৌশলীদের কপালে ভাঁঁজ ফেলছে তা হচ্ছে বিম ও কলামের (কলাম সাধারণভাবে পিলার হিসেবে পরিচিত) সংযোগস্থলে ইস্পাতের জট। স্টিলকে সঠিকস্থানে ধরে রোখতে একে কার্যকর এর চারপাশে খানিকটা কংক্রিটের প্রয়োজন। তবে সংযোগস্থলে যখন অনেকগুলো স্টিল একসাথে চলে আসে তখন সেখানে তৈরি হয় ইস্পাত জট। ফলশ্রুতিতে সেস্থানের ইস্পাতের চারদিকে প্রয়োজনীয় কংক্রিটের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এই সমস্যা বেশি দেখা যায় ভূমিকম্প প্রতিরোধী স্থাপনায় যেখানে বেশি পরিমাণে ইস্পাত ব্যবহার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকন্সিন ও ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক গুস্তাভ পারা ও মন্টেসিনো সফলভাবেই এই ইস্পাত জট সমস্যার সমাধান করলেন স্টিল তন্তুর ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বেলভ্যুতে অবস্থিত লিংকন টাওয়ারের বিলাসবহুল বর্ধিতাংশের দালান নির্মাণে তাঁরা ব্যবহার করেছেন তাদের এই প্রকৌশল সমাধান।
ভবনে নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ প্রকারের ‘যুগলিকারক বিম’ (Coupling Beam)। সাধারণ বিমের সাথে এর পার্থক্য যে এই বিম স্থাপনার দেয়ালগুলোকে দৃঢ় রেখে স্থাপনাটিকে সামগ্রিকভাবে আচরণ করতে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে লিংকন স্কয়ারের নির্মাণকাজেই শুরু হয়েছিল যুগলিকারক বিমের ব্যবহার । কিন্তু এই যুগলিকারক বিম ব্যবহারে কংক্রিটে ইস্পাতের সন্নিবেশন নকশা বেশ জটিল হয়ে দাড়াঁয়। প্রায় ক্ষেত্রেই যার কারণে নিমার্ণকাজ বিলম্বিত হয় এবং এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে বেশি।
এতসব সমস্যার সমাধান দিতে গবেষকরা কংক্রিটে মিশিয়ে দিলেন ইস্পাত তন্তু। আর ফলাফলটাও এলো আশাব্যঞ্জক। দেখা গেল, ইস্পাত তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি করছে স্থাপনার শক্তি। আর নির্মাণ কাজের ঝক্কিটাও কমে গেছে অনেকাংশে। যারা এই নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে সেই সিয়াটল ভিত্তিক কাঠামোপ্রকৌশল সংস্থার কেরি কপকজিনস্কি এই প্রযুক্তির প্রশংসা করে বলেন, নিমার্ণশ্রমিকরা এ প্রযুক্তি প্রয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন এবং একই সাথে সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট এর নির্মাণ এই ইস্পাত তন্তুর ব্যবহার সংযুক্ত হয়নি। ২০১৯ সালে প্রকাশিতব্য এসিআই এর পরবর্তী প্রকাশনায় এই প্রযুক্তির স্বীকৃতি মিলতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পারা-মন্টেসিনো গবেষকদ্বয়। তবে তার আগে অবশ্যই অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে এর যথার্থতা।
গবেষকদ্বয় ও তাঁদের শিক্ষার্থীরা এখন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ইস্পাত তন্তু বিশিষ্ট এই যুগলিকারক বিম প্রযুক্তির উপর। সম্প্রতি তারা স্থাপনার বিভিন্ন অংশে ইস্পাত তন্তুর প্রয়োজনীয় পরিমানের একটি সীমা নির্ধারণ করার কাজ করছেন। পারা-মন্টেসিনো গবেষকদ্বয় মূলত জোর দিচ্ছেন বড় আকারের পরীক্ষার উপর যার মধ্য দিয়ে এই প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হতে পারে সন্দেহাতীতভাবে ।
তারিখ: ১০.১.২০১৬